আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের আরা বিধানসভা কেন্দ্রের ৪১ বছর বয়সী মিন্টু পাসওয়ানকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম কেটে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অথচ তিনি জীবিত, এবং তা প্রমাণ করতে ১২ আগস্ট স্বচক্ষে হাজির হন সুপ্রিম কোর্টে। ঘটনায় আদালত থেকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে।
জীবিত মানুষকে মৃত ঘোষণা
মিন্টু পাসওয়ান, যিনি পেশায় একজন গাড়িচালক, বহু বছর ধরেই ভোট দিয়ে আসছেন। তিনি জানান, ২০১৪, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি ভোট দিয়েছেন। এবারও ফর্ম পূরণ করেছিলেন, তবুও নাম বাদ গেছে। আশ্চর্যজনকভাবে তাঁকে মৃত বলা হয়েছে।
পাসওয়ান বলেন, “আমার নাম বাদ দেওয়ার সময় কোনো কাগজপত্র চাইনি কমিশন। এখন ফের নাম যুক্ত করতে ব্যাংক নথি, স্কুল সার্টিফিকেট, আধার কার্ড সব চাইছে। এত ঝামেলা আগে কখনও হয়নি।” তিনি জানান, কেবল তিনি নন, তাঁর ভাই যিনি কেরালায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তাকেও মৃত বলা হয়েছে।
অভিযোগ দায়ের করার পরই প্রথমবার বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) তাঁর বাড়িতে আসেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একজন মানুষ বেঁচে আছেন কি না, সেটা প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করলেই বোঝা যায়। অথচ যাচাই না করেই নাম কেটে দেওয়া হয়েছে।”
৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ
১ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটার। এর মধ্যে ২২ লক্ষকে মৃত বলা হয়েছে, ৩৬ লক্ষকে ‘স্থায়ীভাবে সরে গেছেন’ বলে দেখানো হয়েছে, এবং সাত লক্ষকে ডুপ্লিকেট বলা হয়েছে। বিরোধীরা বলছে, এই সংখ্যাগুলি বাস্তবের তুলনায় অনেক কম দেখানো হয়েছে, বাদ পড়ার সংখ্যা আরও বেশি।
সুপ্রিম কোর্টে বিতর্ক
আদালতে মিন্টু পাসওয়ানকে হাজির করেন রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদব। তিনি বলেন, এটি আলাদা কোনো ভুল নয়, বরং একটি বৃহৎ ‘মাস এক্সক্লুশন’ শুরু হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “এটি ব্যর্থ বাস্তবায়ন নয়, এটি নকশার অংশ। যেখানে যেখানে এই SIR হবে, সেখানেই একই ফল হবে।”
নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদি আদালতে যুক্তি দেন, আদালতে জীবিত মানুষ হাজির করানো আসলে “ড্রামা”। তিনি বলেন, যোগেন্দ্র যাদব চাইলে কমিশনকে তালিকা সংশোধনে সহযোগিতা করতে পারতেন।
তবে বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি বলেন, এটি “অসাবধানতাজনিত ত্রুটি” হতে পারে, যা সংশোধন করা সম্ভব। কিন্তু ঘটনাটি যে ভোটার তালিকা থেকে ভুলভাবে নাম বাদ দেওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট করেছে, তা স্বীকার করেছেন বিচারপতিরা।
সিপিআই(এমএল)-এর অভিযোগ
সিপিআই(এমএল)–এর আগিয়াওন বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক শিব প্রকাশ রঞ্জনও মিন্টু পাসওয়ানকে দিল্লি নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, “আমরা পুরনো ও নতুন ভোটার তালিকা মিলিয়ে আরা বিধানসভা এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। অন্তত চারজনকে মৃত বলা হয়েছে যারা জীবিত।”
তিনি আরও জানান, “গরিব ও অভিবাসী শ্রমিকদের নাম ইচ্ছে করেই বাদ দেওয়া হচ্ছে। মানুষকে অযথা কাগজপত্র খুঁজতে পাঠানো হচ্ছে। যারা বহুবার ভোট দিয়েছেন, তাদের এখন নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে বলা হচ্ছে। এটি ভোটাধিকার হরণ।”
ভোটারদের ওপর নাগরিকত্ব প্রমাণের চাপ
আদালতে আবেদনকারীরা বলেন, নাগরিকত্ব প্রমাণ করার ভার ভোটারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা ২০২৪ সালে ৪০ জন সাংসদ পাঠিয়েছি লোকসভায়। তাঁরা অবৈধ নন। অথচ ভোটারদের এখন অবৈধ বলে দেখানো হচ্ছে। এটা সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন।”
বিতর্কে কমিশন
নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটার তালিকা ‘শুদ্ধ’ করতে এই বিশেষ পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। কিন্তু বিরোধীরা বলছে, আসলে এটি পরিকল্পিতভাবে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি চলছে। আদালত কমিশনকে সংশোধন প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল হতে বলবে কিনা, তা নিয়ে এখন সবার দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত।
