আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিতর্কের কেন্দ্র অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালা মন্দির। তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থান (টিটিডি) ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত এই মন্দিরটিতে ৫৪ কোটি টাকা তছরুপ ধরা পড়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সুতির ‘ওড়না’ কিনতে বিপুল টাকা নয়ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ। একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বিআর নাইডুর উদ্বেগ প্রকাশের পর শুরু হওয়া অভ্যন্তরীণ তদন্তে জালিয়াতিটি ধরা পড়েছে।

তদন্তে দেখা গিয়েছে, একজন ঠিকাদার টেন্ডার নথিতে উল্লেখিত খাঁটি তুঁত সিল্কের পণ্য সরবরাহের বদলে ধারাবাহিকভাবে ১০০ শতাংশ পলিয়েস্টার ‘ওড়না’ সরবরাহ করেছিলেন। ঠিকাদার ‘ওড়না’ তৈরির জন্য বাধ্যতামূলক খাঁটি তুঁত সিল্কের পরিবর্তে সস্তা পলিয়েস্টার উপাদান সরবরাহ করেছিল। এই ‘ওড়না’ মন্দিরের প্রধান দাতাদের উপহার দেওয়া হয় এবং বেদশির্বচনমের মতো মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।

তদন্তে অনুমান করা হয়েছে, গত দশ বছর ধরে এই অনিয়মগুলি সংঘটিত হয়েছে। যার ফলে মন্দির ট্রাস্টের আনুমানিক ৫৪ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। বিআর নাইডু বলেন, “প্রায় ৩৫০ টাকা দামের একটি শালের বিল ১,৩০০ টাকা করা হয়েছিল। মোট সরবরাহের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকারও বেশি হবে। আমরা এসিবি (দুর্নীতি দমন ব্যুরো) তদন্তের দাবি জানিয়েছি।”

জানা গিয়েছে, ‘ওড়না’র নমুনা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের জন্য দু’টি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। যার মধ্যে একটি সেন্ট্রাল সিল্ক বোর্ডের (CSB) অধীনে ছিল। উভয় পরীক্ষায়ই নিশ্চিত হওয়া গেছে যে উপাদানটি পলিয়েস্টার ছিল। যা টেন্ডারের শর্তের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তদন্তকারী আধিকারিকরা আরও জানিয়েছেন, সরবরাহ করা নমুনাগুলিতে আসল রেশম পণ্যের জন্য বাধ্যতামূলক রেশম হলোগ্রামটি অনুপস্থিত ছিল। এই সময়কালে কাপড় সরবরাহের সিংহভাগ দায়িত্ব জন্য একটি নির্দিষ্ট সংস্থা এবং তার সহযোগী সংস্থাগুলির কাঁধে ছিল।

নানা বিতর্কে জর্জরিত অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালা মন্দির। ছবি: উইকিপিডিয়া।

ভিজিল্যান্স রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরেই টিটিডি ট্রাস্ট বোর্ড সংস্থার সমস্ত দরপত্র বাতিল করেছে এবং পুরো বিষয়টির একটি বিস্তৃত ফৌজদারি তদন্তের জন্য রাজ্য দুর্নীতি দমন ব্যুরো (এসিবি)-এর কাছে পাঠিয়েছে।

সম্প্রতি তিরুমালা মন্দিরের পবিত্র লাড্ডু প্রসাদে ব্যবহৃত ঘি-তে ভেজালের অভিযোগ এবং পরকামণি (হুন্ডির টাকা গণনা) চুরির মামলায় জর্জরিত ছিল টিটিডি। কম বিতর্কের মুখেও পড়তে হয়নি টিটিডি-র ট্রাস্ট বোর্ডকে। ফের ‘ওড়না’ কেলেঙ্কারি তিরুমালা মন্দিরে। কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্ত বিশ্বের অন্যতম ধনী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ তদারকি ব্যবস্থার উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে। যার ফলে মন্দিরের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পবিত্র তিরুপতি লাড্ডু প্রসাদকে ঘিরে কেলেঙ্কারির সূত্রপাত। অন্ধ্রপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু অভিযোগ করেন যে মন্দিরে বিতরণ করা লাড্ডুতে খাঁটি গরুর ঘিয়ের পরিবর্তে পশুর চর্বি বা ভেজাল ঘি থাকতে পারে। টিটিডিতে সরবরাহ করা ঘি সরবরাহ শৃঙ্খল এবং মান তদন্তের জন্য সিবিআই-এর তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করা হয়েছিল।

পরকামণি মামলাটি ২০২৩ সালের ২৯ এপ্রিলের। তিরুমালার কাছে একটি মন্দিরের মঠের এক কেরানি ‘শ্রীবরী হুন্ডি’ দানবাক্সে ভক্তদের দেওয়া দান চুরি করার সময় ধরা পড়েন।