আজকাল ওয়েবডেস্ক: তামিলনাড়ুর রামনাথপুরম জেলায় সোমবার এক বিরল সামুদ্রিক প্রাণী ধরা পড়েছে, যাকে “ডুমসডে ফিশ” বা “প্রলয়ের মাছ” বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ওরফিশ একটি লম্বা, ফিতার মতো সামুদ্রিক মাছ, যা সাধারণত সমুদ্রের গভীর স্তরে বাস করে। জাপানি সংস্কৃতিতে এই মাছকে অশুভ সংকেত হিসেবে ধরা হয়, কারণ এর দেখা মেলে সাধারণত বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভূমিকম্পের আগে।


রবিবার রামেশ্বরম ফিশিং পোর্ট থেকে মাছ ধরতে গিয়ে কিছু জেলে গালফ অব মান্নার থেকে ফেরার পথে এই অদ্ভুত মাছটি তাদের জালে ধরা পড়ে। তারা প্রথমে মাছটির উপস্থিতি বুঝতে পারেননি; তীরে পৌঁছে ধরা মাছগুলো আলাদা করার সময় একটি চকচকে, লম্বাটে মাছ তাদের নজরে আসে। সেটিই ছিল ওরফিশ — সমুদ্রের গভীর থেকে উঠে আসা এক রহস্যময় প্রাণী।


এই ধরা পড়া ওরফিশটির ওজন প্রায় ৬ কিলোগ্রাম। এটি এই বছরে ভারতে দ্বিতীয়বার দেখা গেল। এর আগে ২০২৫ সালের মে মাসে তামিলনাড়ুতেই প্রায় ৩০ ফুট লম্বা একটি ওরফিশ ধরা পড়েছিল, যা এত বিশাল ছিল যে সাতজন মানুষ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে সেটি তুলেছিল।

আরও পড়ুন: মঙ্গলে প্রাণ? নাসার হাতে এল অবাক করা তথ্য


ওরফিশ সাধারণত ২০ থেকে ২০০ মিটার গভীরতায় বাস করে এবং খুব কমই জলের উপরের স্তরে দেখা যায়। এজন্যই এর আবির্ভাবকে অনেক সংস্কৃতিতে অস্বাভাবিক বা রহস্যময় ঘটনা হিসেবে দেখা হয়।


এই বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও এমন “ডুমসডে ফিশ”-এর আরও তিনটি দেখা মেলে। জুন মাসে নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডের ডানেডিন ও ক্রাইস্টচার্চ উপকূলে দুটি মাথাবিহীন ওরফিশ ভেসে আসে। দুটিই উপকূলে উঠে আসে ঢেউয়ের সঙ্গে। একই মাসে, ২ জুন, অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার পশ্চিম উপকূলে আরেকটি তিন মিটার লম্বা ওরফিশ দেখা যায়, যা স্থানীয় বাসিন্দা সিবিল রবার্টসন আবিষ্কার করেন।


এরও আগে, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ার টিওয়ি দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি আরেকটি বিশাল ওরফিশ ভেসে আসে। কার্টিস পিটারসন নামের এক ব্যক্তি তার ছবি তুলে ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন। সেই ওরফিশ এতটাই বড় ছিল যে সেটিকে দেখলে মনে হচ্ছিল যেন কোনো সমুদ্রের সাপ ভেসে উঠেছে।


কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন এই ওরফিশকে “প্রলয়ের মাছ” বলা হয়?
জাপানি লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, ওরফিশ সমুদ্রের গভীরে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প বা টেকটোনিক আন্দোলন আগেভাগে টের পায়। এই মাছগুলো ভূমিকম্পের আগে গভীর স্তর থেকে উপরের দিকে উঠে আসে। এজন্যই জাপানে যখনই ওরফিশ দেখা যায়, মানুষ আশঙ্কা করে—সম্ভবত কোনও বড় ভূমিকম্প বা সুনামি আসছে।


জাপানের ইতিহাসে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে বড় ভূমিকম্পের কিছুদিন আগে উপকূলে ওরফিশ দেখা গেছে। বিশেষত ২০১১ সালের তোহোকু ভূমিকম্প ও সুনামির আগে একাধিকবার এই মাছ ভেসে উঠেছিল। তাই এর নাম হয়েছে “Doomsday Fish”, অর্থাৎ “প্রলয়ের বার্তাবাহক মাছ”।


ওরফিশ সাধারণত মানুষের চোখের আড়ালেই থাকে, কারণ তারা সমুদ্রের গভীরে, অন্ধকার জলে বাস করে। কিন্তু যখন কোনও কারণে তারা উপরিভাগে উঠে আসে বা তীরে ভেসে আসে, তা প্রায়ই বড় কোনও প্রাকৃতিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হয়।


তামিলনাড়ুতে এই মাছের পুনরাবির্ভাব শুধু এক জৈবিক কৌতূহল নয়, বরং প্রাচীন বিশ্বাস ও আধুনিক বিজ্ঞানের এক আকর্ষণীয় সংযোগ তৈরি করেছে। সমুদ্রের এই রহস্যময় অতিথি যেন আবারও মনে করিয়ে দিল — প্রকৃতির গভীরে এখনও অনেক অজানা বার্তা লুকিয়ে আছে।