আজকাল ওয়েবডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের দোদা জেলায় এক সরকারি শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি স্কুলের ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের “চরমপন্থী ও হিংসাত্মক” শিক্ষাদান করছিলেন।

জেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপ আসে স্থানীয় সমাজকর্মী রাজা শাকিলের অভিযোগের পর। শাকিল দোদার প্রধান শিক্ষা আধিকারিক (সিইও)-এর কাছে অভিযোগ করেন যে, সরকারি মিডল স্কুল সিচাল-এর শিক্ষক চন্দর কুমার শিশুদের সহিংস মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, শিক্ষক চন্দর কুমার নিজে স্কুলের সকালবেলার প্রার্থনা অনুষ্ঠানের ভিডিও তুলছেন এবং ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত জানাচ্ছেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, “আজ ৬ নভেম্বর। সরকারি মিডল স্কুল সিচালে নতুন ক্লাস শুরু হয়েছে। বাচ্চারা ফিরে এসেছে স্কুলে। সকালবেলার প্রার্থনা চলছে। আমি সবাইকে স্বাগত জানাই। জয় হিন্দ, জয় ভারত।”

তবে তার পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় চল্লিশজন ছাত্রছাত্রী একসঙ্গে গাইছে, “খুন সে তিলক করো, গোলিয়োঁ সে আরতি” — অর্থাৎ “রক্ত দিয়ে তিলক করো, গুলিতে আরতি করো।”

এই শ্লোকের তাৎপর্যই তৈরি করেছে বিতর্ক। ‘আরতি’ হিন্দু ধর্মীয় উপাসনার একটি অংশ, যেখানে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে ভক্তিগীতি গাওয়া হয়। শিশুদের মুখে “রক্ত” ও “গুলি”-র মতো শব্দ উচ্চারণে সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে।

রাজা শাকিল তার অভিযোগে লিখেছেন, “এ ধরনের আচরণ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সাংবিধানিক ও নৈতিক নীতির পরিপন্থী। এমন শিক্ষাদান ঘৃণা ও হিংসা  ছড়ায়, যা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।” তিনি আরও বলেন, “সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার ও আদর্শের দিশা পেতে চায়, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় প্রভাব নয়।”

অভিযোগের পর দ্রুত ব্যবস্থা নেয় শিক্ষা দপ্তর। দোদার প্রধান শিক্ষা আধিকারিক এক আদেশে জানান, তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চিল্লি, জাকিয়াস এবং চান্টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা এই তদন্তে থাকবেন। দুই দিনের মধ্যে তারা লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, “চন্দর কুমার, শিক্ষক, সরকারি মিডল স্কুল সিচাল-এর বেতন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। ছাত্রছাত্রীদের মানসিক কল্যাণ ও বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এই নির্দেশ জারি করা হচ্ছে।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনার কয়েক দিন আগেই জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের নির্দেশে স্কুলগুলোতে জাতীয় সংগীত ও বন্দে মাতরম পাঠ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তে ধর্মীয় সংগঠনগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

দোদা জেলার সিইও-র এমনই এক নির্দেশের কথা প্রথম প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম। পরে বুধবার ধর্মীয় সংগঠনগুলির সর্ববৃহৎ মঞ্চ মুতাহিদা মজলিস-ই-উলামা (এমএমইউ) প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে এই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

এক বিবৃতিতে এমএমইউ জানায়, “বন্দে মাতরম গান গাওয়া বা পাঠ করা ইসলামী নীতির পরিপন্থী, কারণ এতে আল্লাহর একত্ববাদের (তাওহিদ) বিরুদ্ধে ভক্তি প্রকাশের উপাদান রয়েছে। ইসলাম এমন কোনও কর্ম অনুমোদন করে না, যেখানে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কারও প্রতি উপাসনা বা ভক্তি প্রদর্শিত হয়।”

বর্তমানে, জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরের তদন্ত চলেছে। সমাজের বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে—শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশপ্রেমের নামে সহিংস ভাবধারা প্রচার কি ন্যায়সঙ্গত? আর ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার পটভূমিতে এই ঘটনাকে অনেকেই দেখছেন জম্মু-কাশ্মীরের চলমান সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রতিফলন হিসেবে।