আজকাল ওয়েবডেস্ক: চীন প্রথমবারের মতো নাসাকে সরাসরি জানিয়েছে যে তাদের স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে মহাকাশে সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং তারা সেই পরিস্থিতি এড়াতে একটি কক্ষপথ পরিবর্তন বা ম্যানুভার করতে যাচ্ছে। এটি মহাকাশ সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ও নজিরবিহীন ঘটনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


আন্তর্জাতিক মহাকাশ সম্মেলন সিডনিতে আয়োজিত এক বৈঠকে, নাসার স্পেস সাসটেইনেবিলিটি ডিরেক্টর অ্যালভিন ড্রিউ এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এতদিন পর্যন্ত যখনই মহাকাশে নাসা ও চীনের স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষ দেখা যেত, তখন নাসাই চীনা মহাকাশ সংস্থাকে জানাত—“আমরা মনে করছি সংঘর্ষের সম্ভাবনা আছে, তাই আমরা পথ পরিবর্তন করব, আপনারা স্থির থাকুন।” কিন্তু এবারে ঘটেছে উল্টোটা।


ড্রিউর ভাষায়, “১ অক্টোবর চীনের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা (CNSA) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, তাদের স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে একটি conjunction দেখা যাচ্ছে। তারা বলেন, ‘আমরা সমস্যাটি শনাক্ত করেছি। আমরা নিজেরাই ম্যানুভার করব, আপনারা স্থির থাকুন।’—এটাই প্রথমবার চীন এমনভাবে নাসাকে সতর্ক করেছে।”


চীনের মহাকাশ সক্ষমতায় বড় অগ্রগতি
এই ঘটনাটি কেবল প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, কূটনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এটি দেখায় যে, চীন এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে তাদের মহাকাশে নিজের ও অন্যদের স্যাটেলাইটের অবস্থান পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা—অত্যন্ত উন্নত। এখন তারা সম্ভাব্য সংঘর্ষ আগে থেকেই শনাক্ত করতে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সক্ষম।


চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মহাকাশে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। দেশটি আগামী দশকের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানো, চাঁদ থেকে নমুনা সংগ্রহ, এবং মঙ্গলগ্রহ থেকে শিলা ও মাটি সংগ্রহের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। চীনের নিজস্ব তিয়ানগং স্পেস স্টেশন ইতিমধ্যেই কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে, এবং দেশটি এর সম্প্রসারণেও কাজ করছে।


স্যাটেলাইটের ভিড় ও সংঘর্ষের ঝুঁকি
বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের SpaceX কোম্পানি তাদের Starlink প্রোগ্রামের অধীনে হাজার হাজার ছোট স্যাটেলাইট স্থাপন করছে, যা বিশ্বের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তৈরির অংশ। অপরদিকে চীন তৈরি করছে নিজস্ব Guowang এবং Thousand Sails নামের দুটি বৃহৎ স্যাটেলাইট মেগাকনস্টেলেশন।


চীনের ২০২২ সালের Space White Paper-এ ২০২১ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত মহাকাশ উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে স্যাটেলাইট যোগাযোগ, নেভিগেশন, রিমোট সেন্সিং ও মহাকাশ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


স্যাটেলাইটের সংখ্যা যত বাড়ছে, ততই space traffic management বা মহাকাশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ আরও জটিল হয়ে উঠছে। সামান্য ভুল হিসাব বা অবহেলার কারণে দুটি স্যাটেলাইটের সংঘর্ষ ঘটলে তার ফলে হাজার হাজার টুকরো মহাকাশ আবর্জনা তৈরি হতে পারে—যা ভবিষ্যতের মহাকাশযাত্রাকে বিপজ্জনক করে তুলবে।


মহাকাশ আবর্জনা রোধে চীনের অঙ্গীকার
চীনা মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, মহাকাশে বর্জ্য বা ভাসমান আবর্জনা অপসারণ তাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। তারা ইতিমধ্যেই এমন প্রযুক্তি তৈরি করছে যা রোবোটিক আর্ম বা নেট সিস্টেম ব্যবহার করে পুরনো স্যাটেলাইট বা ভগ্নাংশ সরিয়ে ফেলতে পারবে।


এই ঘটনাটি, যেখানে চীন নিজ উদ্যোগে নাসাকে সতর্ক করেছে, তা দেখায় যে দেশটি শুধু মহাকাশ প্রতিযোগিতায় নয়, মহাকাশ নিরাপত্তা ও দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে চাইছে।