আজকাল ওয়েবডেস্ক: ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সাপ্তাহিক রেজিমেন্টাল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এক সেনা অফিসার। তাঁর এই পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষের নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ বলে যুক্তি দেয় বাহিনী। বরখাস্ত করা হয় ওই অফিসার স্যামুয়েল কমলেসনকে। বাহিনীর শাস্তিমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেন বরখাস্ত সেনা অফিসার। কিন্তু বরকাস্তের সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত বলে উচ্চ-আদালত অফিসারের বিরুদ্ধে রায় দেয়। শেষমেষ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন বরখাস্ত সেনা অফিসার। সেখানেও একই রায় হয়।

কী রায় দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট?
সেনা অফিসারের কাজকে শৃঙ্খলাভঙ্গ বলে জানায় হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, "ঐক্য ধর্মের মাধ্যমে নয়, ইউনিফর্মে তৈরি হয়।"

সুপ্রিম কোর্টের রায়:
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট ওই খ্রিস্টান সেনা অফিসারের বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে।

অফিসারটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধ্য করা তার ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু আদালত তা খারিজ করে দিয়েছে।

ভারতের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দিল্লি হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছে। প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত পর্যবেক্ষণ, "তিনি (বরখাস্ত সেনা অফিসার) কী ধরণের বার্তা দিচ্ছেন...এটার জন্য তাঁকে বহিষ্কার করাই উচিত...সাম্প্রদায়িক আচরণ একজন সেনা কর্তার সবচেয়ে জঘন্য শৃঙ্খলাভঙ্গ।" 

বরখাস্ত অফিসারের পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র অ্যাডভোকেট গোপাল শঙ্করনারায়ণন আদালতে যুক্তি দেন যে, বেশিরভাগ রেজিমেন্টাল সদর দপ্তরে একটি সর্বধর্ম স্থল রয়েছে, তবে পাঞ্জাবের মামুমে শুধু একটি মন্দির এবং গুরুদ্বার রয়েছে। তিনি বলেন, "এই বিশেষ রেজিমেন্টাল কেন্দ্রে, কেবল একটি মন্দির বা গুরুদ্বার রয়েছে। তিনি (অফিসার) মন্দিরে প্রবেশ করতে অস্বীকার করে বলেছিলেন যে, গর্ভগৃহে প্রবেশ করা তাঁর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। আমি বাইরে থেকে ফুল দেব কিন্তু প্রবেশ করব না। অন্য কারও সমস্যা ছিল না, তবে শুধুমাত্র একজন ঊর্ধ্বতন সেনা আধিকারিক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করেছিলেন।"  

তখন বেঞ্চ জিজ্ঞাসা করে যে, "এই ধরণের ঝগড়াটে ব্যক্তি কি একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে গ্রহণযোগ্য? তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সুশৃঙ্খল বাহিনীর একজন সদস্য, তিনি এটা কীভাবে করতে পারেন? এটা একজন সেনা কর্তার সবচেয়ে জঘন্য ধরণের শৃঙ্খলাহীনতা।।" অফিসারের  আইনজীবীকে বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেন যে, তাঁর মক্কেলের এই পদক্ষেপ কি অন্য সৈনাদের অপমান করে না? বরখাস্ত সেনা অফিসারের 'অহংবোধ'-এর নিন্দা করেছে বেঞ্চ।

বেঞ্চ আরও উল্লেখ করেছে যে, সংশ্লিষ্ট অফিসারকে একজন যাজক বলেছিলেন যে- মন্দিরে প্রবেশ করলে বিশ্বাসভঙ্গ হয় না, কিন্তু তিনি তারপরও মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে অস্বীকার করেছিলেন। বেঞ্চ সেনা অফিসারের আপিল খারিজ করে উল্লেখ করেছে, "আপনি সব ধর্মের উপসনালয়ে প্রবেশ করতে পারেন। তিনি তাঁর নিজের যাজকের এই পরামর্শও অনুসরণ করেননি।"