গোপাল সাহা, কসবা: প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা, তারপর বিছানার তলায় দেহ লুকিয়ে রেখে চম্পট দিয়েছিল কসবার হোটেলের হত্যাকারীরা। চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আদর্শ লোসালকা হত্যাকাণ্ডে প্রতিদিন উঠে আসছে অবাক করা সব তথ্য। সোমবার লালবাজারে সাংবাদিক বৈঠকে জয়েন্ট সিপি ক্রাইম রুপেশ কুমার এবং ডেপুটি কমিশনার (সাউথ সাবার্বান) বিদিশা কলিতা দাশগুপ্ত এই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তাঁরা বলেন, ধ্রুব আর কমল দীর্ঘদিনের পরিচিত, একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে তাঁদের প্রেম। এঁরাই যৌথভাবে অপরাধ সংগঠিত করেছেন। মনে করা হচ্ছে, ঘটনার দিন রাতের খাবারের পর কোনও গোলমাল বেঁধেছিল, যেটি বড় আকার নেয়। আর সেই ঘটনার ফলস্বরূপ আদর্শকে গলা টিপে হত্যা করেন অপরাধী যুগল।
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার একটি জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপে আদর্শের সঙ্গে পরিচয় হয় কমলের। পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার তাঁরা দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ তাঁরা শান্তিপল্লির ওই হোটেলে চেক–ইন করেন। আদর্শ একসঙ্গে পাঁচতলার দু’টি ঘর বুক করেছিলেন। ধ্রুব ও আদর্শের পরিচয়পত্রের জেরক্স জমা দেওয়া হয়েছিল রিসেপশনে। অনলাইন ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে খাবারও অর্ডার করা হয়।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর কোনও কারণে শুরু হয় তর্কাতর্কি। সেই বচসা মুহূর্তে রূপ নেয় হিংসায়। গোয়েন্দাদের দাবি, অভিযুক্ত ধ্রুব ও কমল মিলে আদর্শকে প্রথমে মারধর করেন, তারপর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ঘর লন্ডভন্ড অবস্থায় ছিল, যা ধস্তাধস্তির স্পষ্ট প্রমাণ বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। এর পরেই মৃতদেহটি বিছানার নিচে লুকিয়ে রেখে রাত দু’টো নাগাদ হোটেল থেকে বেরিয়ে যান ওই যুগল।
হত্যার পর আদর্শর ওয়ালেট থেকে দেড় হাজার টাকা, দু’টি মোবাইল, এটিএম কার্ড তুলে নেন অভিযুক্তরা। শুধু তাই নয়, আদর্শের সিমকার্ড নিজেদের ফোনে ঢুকিয়ে পিন নম্বর বদলে ফেলেন ধ্রুব ও কমল। তারপর অ্যাপ বাইকে চেপে উল্টোডাঙায় গিয়ে একটি এটিএম থেকে ১১ হাজার টাকা তুলে নেন তাঁরা। আদর্শর দু’টি ফোন এবং অভিযুক্তের দু’টি ফোন, মোট চারটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি ক্রাইম রুপেশ কুমার।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, একাদশ শ্রেণি থেকে ঘনিষ্ঠ ছিলেন ধ্রুব ও কমল। দু’জনের পরিবারও সে সম্পর্কে জানত। ধ্রুব কাজ করেন একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপে, আর কমল কাজ করেন ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটর হিসাবে। দমদমে একটি ভাড়া বাড়িতে লিভ–ইন করতেন তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে আদর্শর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। ফলে ব্ল্যাকমেলের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জয়েন্ট সিপি ক্রাইম রূপেশ কুমার বলেন, ‘ধৃতদের বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। খুনের প্রকৃত মোটিভ এখনও স্পষ্ট নয়। নিহত ও অভিযুক্তদের চারটি মোবাইল ফোন ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে সবটা পরিষ্কার হবে।’
