আজকাল ওয়েবডেস্ক: পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর দীর্ঘদিনের সীমান্ত অচলাবস্থার অবসান ঘটলেও ভারতের সঙ্গে চিনের আরও এক নতুন সংঘাতের সূত্রপাত হতে চলেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে তারই ইঙ্গিত মিলেছে। পেন্টাগনের রিপোর্ট অনুযায়ী, চীন- তাইওয়ানের পাশাপাশি ভারতের অরুণাচল প্রদেশের উপর তাদের দাবিকেও চীন 'মূল স্বার্থ' হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এতে বলা হয়েছে যে, এই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটি নয়াদিল্লি-বেজিং'য়ের সম্পর্কে একটি বড় সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেওয়া ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীনের কাছে অরুণাচল, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরে অন্যান্য আঞ্চলিক ও সামুদ্রিক দাবিগুলো ২০৪৯ সালের মধ্যে 'মহান পুনরুথ্থান'-র লক্ষ্যপূরণে গুরুত্বপূর্ণ। "মহান পুনরুথ্থান" পরিকল্পনার অংশ হিসেবে 'লড়াই জিতে নেওয়ার ক্ষমতা' সম্পন্ন এক 'বিশ্বমানের সেনাবাহিনী' গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেজিংয়ের।
নয়াদিল্লি বরাবরই বলে আসছে যে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।
অরুণাচল সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু
গত বছর ভারত ও চীন, পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল। তবে, কয়েক মাস শান্ত থাকার পর সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
গত মাসে প্রেমা থংডক নামে এক ভারতীয় নাগরিক লন্ডন থেকে জাপান যাওয়ার পথে সাংহাইতে যাত্রাবিরতির সময় ১৮ ঘণ্টা আটকে ছিলেন। থংডক জানান, চীনা কর্মকর্তারা দাবি করেন যে- তাঁর পাসপোর্টটি অবৈধ, কারণ এতে জন্মস্থান হিসেবে অরুণাচল প্রদেশের নাম উল্লেখ করা ছিল। তাঁকে খাবার এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল।
অবশেষে থংডক ব্রিটেনে থাকা এক বন্ধুর মাধ্যমে সাংহাইতে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, এবং তাঁর যাত্রা ফের শুরু করতে সক্ষম হন।
এই সপ্তাহের শুরুতে একজন ইউটিউবারকে চীনে আটক করা হয়, কারণ তিনি থংডককে সমর্থন করে তৈরি করা একটি ভিডিওতে অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টি আমলে নেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ'
বেজিং অরুণাচল প্রদেশকে চীনের অংশ বলে দাবি করে এবং এই অঞ্চলটিকে দক্ষিণ তিব্বত বা জাংনান বলে অভিহিত করে। এর কারণ হল, চীন ১৯১৪ সালে ব্রিটিশদের আঁকা ম্যাকমোহন লাইনকে স্বীকার করে না। এই সীমান্ত নির্ধারণ চুক্তিটি ব্রিটেন এবং তৎকালীন স্বাধীন তিব্বতের মধ্যে হয়েছিল।
পুরো অরুণাচলের মধ্যে তাওয়াং চীনের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে, পূর্বে- চীন কেবল তাওয়াংয়ের উপরই দাবি করত। পরে, তারা পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটির ওপর তাদের দাবি প্রসারিত করে। তখন থেকে চীন ভারতের ওপর চাপ বাড়াতে অরুণাচলের স্থানগুলোর জন্য পর্যায়ক্রমে নতুন নামের তালিকা প্রকাশ করে আসছে।
একজন প্রাক্তন কূটনীতিক বলেছেন, অরুণাচল প্রদেশে চীনের কৌশলগুলো সম্পর্কে আমেরিকার অবগত হওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ।
মহেশ সচদেব সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, "অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাদাখ-সম্পর্কিত ঘটনাবলী বিস্তারিতভাবে তুলে ধরলেও অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে নীরব ছিল। এখন যেহেতু তারা এই পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে অবগত হয়েছে, এটি প্রমাণ করে যে চীন অরুণাচল প্রদেশে ভারতের বিরুদ্ধে যে চাপ প্রয়োগ এবং অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করে, সে সম্পর্কে আমেরিকা এখন আরও ভালভাবে সচেতন।"
চীনের পাকিস্তান কৌশল
মার্কিন প্রতিবেদনে ভারতের জন্য আরেকটি সতর্কবার্তা ছিল। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর উত্তেজনা হ্রাস করাটা ছিল চীনের দীর্ঘমেয়াদী দ্বৈত কৌশলের অংশ - যা সীমান্তে কৌশলগত শান্ত পরিস্থিতি বজায় রাখার পাশাপাশি তার সর্বসময়ের বন্ধু পাকিস্তানের মাধ্যমে অবিরাম সামরিক চাপ প্রয়োগের সমন্বয়।
অপারেশন সিঁদুরের সময় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, যেখানে পাকিস্তান সংঘাতের সময় বেশিরভাগই চীনা তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। সেই অস্ত্র এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছিল, তা অবশ্য ভিন্ন বিষয়।
এতে আরও বলা হয়েছে যে, এলএসি বরাবর শান্ত পরিস্থিতি বজায় রেখে চীন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করছে এবং দিল্লিকে ওয়াশিংটনের কাছাকাছি যাওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে।
