আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে মায়েদের স্তনদুগ্ধে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, নমুনা হিসেবে নেওয়া ৪০ জন মায়ের প্রত্যেকের দুধেই ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা গবেষকদের ভাষায় “অত্যন্ত দূষিত”। তবে তাঁদের দাবি, বাস্তবে এই দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব অত্যন্ত সীমিত।
গবেষণায় অংশ নেন ১৭ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৪০ জন নারী। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৩ মাস ধরে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। বিহারের ভোজপুর, সমস্তিপুর, বেগুসরাই, খগড়িয়া, কাটিহার ও নালন্দা—এই ছয় জেলার স্তন্যদায়ী মায়েদের স্তনদুগ্ধ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে কাটিহার জেলায়, যেখানে দুধে ইউরেনিয়ামের পরিমাণ মিলেছে ৫.২৫ µg/L, যা অন্যান্য জেলার তুলনায় ‘বিপজ্জনক মাত্রা’ হিসেবে চিহ্নিত। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, দুধে মিল পাওয়া ইউরেনিয়ামের মাত্রা আন্তর্জাতিক নির্দেশিকায় বর্ণিত অনুমোদিত সীমার নিচে। উল্লেখ্য, স্তনদুগ্ধে ইউরেনিয়ামের কোনো নির্দিষ্ট স্বীকৃত ‘পারমিসিবল লিমিট’ নেই; তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ভূগর্ভস্থ জলে ইউরেনিয়ামের অনুমোদিত সীমা ৩০ µg/L নির্ধারণ করেছে।
ইউরেনিয়ামের উৎস কোথায়?
গবেষণার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিহারের একাধিক জেলায় ভূগর্ভস্থ জলে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে বেশি। সুপৌল জেলায় পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ৮২ µg/L, নালন্দায় ৭৭ µg/L এবং বৈশালিতে ৬৬ µg/L। ফলে পানীয়জল এবং সেই জল দিয়ে সেচ দেওয়া কৃষিজ ফসলই এই দূষণের প্রধান উৎস হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
গবেষণা বলছে, বিহারে দীর্ঘদিন ধরে ভূগর্ভস্থ জল পান ও কৃষিকাজে নির্বিচারে ব্যবহার করা হচ্ছে, ফলে জলস্তর ক্রমে দূষিত হচ্ছে। অপরিশোধিত শিল্প-বর্জ্য নদী ও জলাশয়ে ফেলায় বিষাক্ত ধাতু খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করছে। এছাড়া অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার মাটি ও জল দূষণে ভূমিকা রাখছে।
দূষণের সঠিক উৎস এখনও পরিষ্কার নয়। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া তদন্ত চালাচ্ছে। ইউরেনিয়াম খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ক্যানসার, স্নায়বিক সমস্যা ও শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে—যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
দুধের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম শিশুর ওপর কী প্রভাব ফেলে?
গবেষণায় বলা হয়েছে, স্তনদুগ্ধে থাকা ইউরেনিয়াম শিশুদের IQ কমিয়ে দিতে পারে, স্নায়বিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ভবিষ্যতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে প্রভাব ‘অত্যন্ত কম’ বলেই দাবি করা হয়েছে।
এর বৈজ্ঞানিক কারণ—
ইউরেনিয়াম হাড় ও কিডনিতে জমা হয়, দুধে নয়।
দুধের উপাদানগুলোর সঙ্গে এর সামঞ্জস্য কম থাকায় দুধে এর ঘনত্ব স্বাভাবিকভাবেই কম থাকে।
দেহের প্রধান বর্জনপথ হচ্ছে প্রস্রাব, ফলে শিশুদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের সম্ভাবনা কম।
