সাম্প্রতিক সময়ে সোনার বাজারে এক নতুন প্রবণতা দেখা দিচ্ছে—গোল্ড লিজিং বা অলস থাকা সোনার গহনা প্রস্তুতকারক ও রিফাইনারদের কাছে “ভাড়া দেওয়া।” বছরের পর বছর ধরে সোনাকে একটি নন-ইয়িল্ডিং অ্যাসেট হিসেবে ধরা হতো—যা কিনে শুধু মূল্যবৃদ্ধির অপেক্ষায় থাকা যায়। কিন্তু এবার বিনিয়োগকারীরা সেই ধারণা বদলে দিচ্ছেন। ২০২৫ সালে সোনার দাম রেকর্ড ছুঁয়ে যাওয়ায় অনেক ধনী বিনিয়োগকারী আর তাদের সোনার বার শুধু ভল্টে আটকে রাখছেন না; বরং সেগুলো লিজ দিয়ে বাড়তি আয় করছেন।
2
9
ভারতেও গোল্ড লিজিংয়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আগের ২-৩% লিজ রেট বেড়ে এখন হয়ে গেছে ৬-৭%। উৎসব সিজন, বিয়ের সিজন এবং সোনার সরবরাহ কমে যাওয়া—এসবই দাম বৃদ্ধির কারণ। ডিজিটাল গোল্ড অ্যাপ ও বিভিন্ন মনিটাইজেশন স্কিম সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও সোনা থেকে অতিরিক্ত আয় করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
3
9
নন-ইয়িল্ডিং সোনাকে আয়-উৎপাদনকারী সম্পদে পরিণত করা বিনিয়োগকারীদের কাছে এখন অত্যন্ত আকর্ষণীয়। শুধু ২০২৫ সালেই একটি প্রতিষ্ঠানের গোল্ড লিজিং ভলিউম ২ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৪০ মিলিয়নে পৌঁছেছে—যা এই নতুন ট্রেন্ডেরই প্রতিফলন।
4
9
গোল্ড লিজিং মূলত এক ধরনের ঋণ প্রক্রিয়া, তবে এখানে মূলধন নগদ নয়—সোনায় নির্ধারিত। বিনিয়োগকারীরা তাদের সোনা কোনো প্ল্যাটফর্ম বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দেন। তারপর প্রতিষ্ঠানটি সেই সোনা রিফাইনার, জুয়েলারি নির্মাতা বা প্রস্তুতকারকদের কাছে ধার দেয়। তারা সোনাকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে গহনা বা পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে। এর ফলে তাদের নগদঋণ নিতে হয় না এবং সোনার দামের ওঠানামার ঝুঁকিও কমে।
5
9
নির্দিষ্ট সময় শেষে ব্যবসায়ীরা একই পরিমাণ সোনা ফেরত দেন—সাথে যোগ হয় ইন্টারেস্ট হিসেবে অতিরিক্ত সোনা, যা সাধারণত বার্ষিক ২-৭%। লিজের মেয়াদ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হতে পারে। মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারীর ডিজিটাল অ্যাকাউন্টে মূল সোনা ও আয়ের সোনা জমা হয়। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রার অস্থিরতা মোকাবিলায় এটি এখন নতুন বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ কৌশল হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে।
6
9
এরিক স্প্রট বা সেথ ক্লারম্যানের মতো বিলিয়নিয়াররাও সোনাকে অস্থির অর্থনৈতিক পরিবেশে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করেন।
7
9
গোল্ড লিজিংয়ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হল ডিফল্ট রিস্ক—অর্থাৎ যে জুয়েলারি বা প্রস্তুতকারক সোনা ধার নেয় তিনি দেউলিয়া হয়ে গেলে বা ঋণ শোধ করতে না পারলে বিনিয়োগকারী তার সোনা ফেরত নাও পেতে পারেন। এছাড়া আছে বাজার-ঝুঁকি—লিজ চলাকালে যদি সোনার দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, বিনিয়োগকারী বিক্রি করে লাভ করার সুযোগ হারাতে পারেন।
8
9
তরলতার ঝুঁকিও রয়েছে; লিজ দেওয়া সোনা তৎক্ষণাৎ তুলে নেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। পরিবহন বা ব্যবহারের সময় সোনা হারানো, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা চুরি হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। আরও আছে—ইন্টারেস্ট রেট রিস্ক, রিটার্ন যদি মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে না বাড়ে তবে প্রকৃত আয় কমে যেতে পারে। পাশাপাশি, নৈতিক ঝুঁকিও আছে—সোনা যদি কোনো অনৈতিক কোম্পানির কাজে ব্যবহার হয় তবে বিনিয়োগকারীর সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে।
9
9
ঝুঁকি কমাতে অনেক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী নিরাপত্তা প্রোটোকল ব্যবহার করে। তারা বিশ্বাসযোগ্য জুয়েলারদের সঙ্গে কাজ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক গ্যারান্টিও রাখে।