আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়েছিল। নিহত হয়েছিলেন ২৬ জন। কেটে গিয়েছে প্রায় তিন মাস। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা সংগঠন- দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। এবার দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট-কে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও বলেছেন, "আজ, মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)-কে বেদিশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন (এফটিও) এবং বিশেষভাবে মনোনীত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন (এসডিজিটি) হিসাবে তালিকাভুক্ত করছে।"

ট্রাম্প প্রশাসন পহেলগাঁও-তে জঙ্গি হামলাকে ২০০৮ সালে লস্কর পরিচালিত মুম্বই হামলার পর ভারতে সাধারণ নাগরিকদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যা কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স নামেও পরিচিত, পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে আগেই। তবে, কয়েকদিন পরে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি তাদের বিবৃতি প্রত্যাহার করে এবং ২২ জুলাইয়ের হামলায় কোনওভাবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত "বিদেশি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী" হিসাবে মনোনীত একটি ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে একাধিক জঙ্গি হামলা চালানোর জন্য অভিযুক্ত। ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বইয়ে সংঘটিত তিন দিনের ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার নেপথ্যেও ছিল এই জঙ্গি গোষ্ঠী।

মার্কিন বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, "বিদেশ দপ্তরের গৃহীত এই পদক্ষেপগুলি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং পহেলগাঁও হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ন্যায়বিচারের আহ্বান বাস্তবায়নের সাপেক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়টিকেই তুলে ধরে।" 

এর আগে, ভারতীয় সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সফরের সময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই এবং দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থনের কথা জানিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

কারা এই দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট?
সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সৈয়দের সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা সংগঠন হল দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। ২০১৯ সাল থেকেই কাজ করছে এই সংগঠন। গত কয়েক বছর ধরে জম্মু-কাশ্মীরে পরিযায়ী শ্রমিক, কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগও আছে দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট-এর বিরুদ্ধে। 

২০২১ সালে জম্মুতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে ড্রোন দিয়েও হামলা চালিয়ছিল এই সংগঠন। পুলওয়ামাতেও হামলার পিছনে এই সংগঠন ছিল বলে জানা গিয়েছে। ২০২৩ সালেই এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

আরও পড়ুন-  লাদাখে দু'টি ড্রোন ধ্বংস করে নজির, ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন মাইলস্টোন 'আকাশ প্রাইম'

পহেলগাঁও হামলা এবং পরিণতি
গত ২২শে এপ্রিল, চারজন সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী পহেলগাঁও-এর বৈসরান উপত্যকায় হামলা চালায় এবং তাদের ধর্ম নিশ্চিত করার পর হিন্দু পুরুষদের গুলি করে।

এর ফলে ভারত, ৭ই মে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসীবাদী লঞ্চপ্যাডগুলিতে অপারেশন সিঁদুর অভিয়ান চালায়। অভিযান চলাকালীনই ভারত, রাওয়ালপিন্ডিতে নূর খান বিমান ঘাঁটি-সহ পাকিস্তানের প্রধান সামরিক পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করে। পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং পাঞ্জাব ও রাজস্থানের আন্তর্জাতিক সীমান্তে বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে।

ওয়াশিংটন এবং উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার পর রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে ট্রুথ সোশালে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। তবে, ভারত ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি ছিল, যুদ্ধবিরতি তাঁর হস্তক্ষেপ বা বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করার হুমকির কারণেই হয়েছিল।

ভারত অবশ্য দাবি করেছে যে, নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে যেকোনও সমস্যা সরাসরি দুই দেশের মধ্যে নিষ্পত্তি করা উচিত, বাইরের কোনও হস্তক্ষেপ ছাড়াই।

পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের ডিজিএমও তাঁর ভারতীয় কাউন্টারপার্টের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির অনুরোধের পর গুলি বিনিময় শেষ হয়। ১০ মে উভয় পক্ষই পারস্পরিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।