আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজ্ঞানের জাদুকাঠিতে অসম্ভব নয় কিছুই। ফের একবার মিলল তার প্রমাণ। বিজ্ঞানের বিস্ময় যেন আবারও চমকে দিল বিশ্বকে। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও-তে জন্ম নিল এমন এক শিশুপুত্র যে প্রায় তিন দশক আগে থেকে হিমঘুমে শায়িত ছিল!
২৬ জুলাই, এই বিরল ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকায়। সদ্যোজাত শিশুর নাম ঠাডিয়াস ড্যানিয়েল পিয়ার্স। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী শিশুদের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে থাকবে ছোট্ট ঠাডিয়াস। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যে ভ্রূণটি থেকে শিশুটির জন্ম হয়েছে, সেটি হিমায়িত করে রাখা হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। অর্থাৎ দীর্ঘ তিরিশ বছরেরও বেশি সময় হিমঘুমে ছিল সে। অবশেষে আজ সে এক জীবন্ত শিশু।
আরও পড়ুন: ভাইরাল ‘আপত্তিকর’ ভিডিও! দশ নায়িকার গোপন মুহূর্ত ফাঁস হওয়ায় কম্পন বলিউডে
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯০-এর দশকে। লিন্ডা আর্চার্ড নামের এক নারী ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন-এর মাধ্যমে মা হন। সে সময়ে তাঁর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা একটি ভ্রূণ থেকে জন্ম নেয় একটি কন্যাসন্তান। কিন্তু সাধারণত এই পদ্ধতিতে একাধিক ভ্রূণ তৈরি রাখা হয়। যাতে প্রয়োজনে সেগুলিও ব্যবহার করা যায়। সেই সময় ওই অবশিষ্ট ভ্রূণগুলি ক্রায়োপ্রিজার্ভেশন, অর্থাৎ তরল নাইট্রোজেনে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়। দীর্ঘ তিন দশক ধরে সেই ভাবেই সংরক্ষিত ছিল ভ্রূণগুলি।
পরবর্তীতে, লিন্ডা আর্চার্ড তাঁর ডিভোর্সের পর এই ভ্রূণগুলির অধিকার পান। লিন্ডা সিদ্ধান্ত নেন, এই সংরক্ষিত ভ্রূণগুলিকে তিনি দত্তক হিসাবে এমন কোনও দম্পতিকে দেবেন যাঁরা সন্তান চান কিন্তু সন্তানধারণে অক্ষম। সেই ইচ্ছে থেকেই তিনি বেছে নেন লিন্ডসে ও টিম পিয়ার্স নামের এক দম্পতিকে। পিয়ার্স দম্পতি ভালবাসা ও যত্নে সেই ভ্রূণ থেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভূতপূর্ব কেরামতিতে, সেই ১৯৯৪ সালে সংরক্ষিত একটি ভ্রূণ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় লিন্ডসের গর্ভে। প্রসব কিছুটা জটিল এবং কঠিন হলেও সেই ভ্রূণ থেকেই পরেও জন্ম নেয় এক সুস্থ শিশু।
আরও পড়ুন: ‘ভুল রাস্তায়’ সঙ্গম! বিয়ের চার বছরেও সন্তান না আসার পর সঠিক পদ্ধতি জানতে পারলেন দম্পতি
যে চিকিৎসকের হাত ধরে এই ঘটনা ঘটেছে, তিনি প্রবল ভাবে আস্তিক একজন মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চিকিৎসক বলেন, “প্রত্যেকটি ভ্রূণেরই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমার কাজ সেই সম্ভবনাকে সত্যি করে তোলা।” তাঁর এই ভাবনা শুধু চিকিৎসার দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং মানবিকতার দিক থেকেও আলোচিত হচ্ছে।
খুশি লিন্ডাও। তিনি জানিয়েছেন, নবজাতক ঠাডিয়াস দেখতে অনেকটাই তাঁর মেয়ের মতো। ঠাডিয়াসের দিদি জন্মেছিলেন সেই ১৯৯৪ সালে। মেয়ের পুরনো ছবির সঙ্গে সদ্যোজাত শিশুর মুখ মিলিয়ে দেখে লিন্ডা বলেন, “মনে হচ্ছে যেন ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।”
সবমিলিয়ে এই ঘটনা নিছক একটি শিশুর জন্ম বৃত্তান্ত নয়। এটি বিজ্ঞানের জয় ও বটে। ৩০ বছর আগে একটি ভ্রূণে সঞ্চিত জীবনের সম্ভাবনাকে বাস্তবের রূপ দেওয়ার আখ্যান। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি, মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা ও মানবিক সংবেদন, এই সব কিছু মিলিয়ে ঠাডিয়াসের জন্ম মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ।
