আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকালে ঘুম থেকে উঠে বা দিনের যে কোনও সময়ে শৌচাগারে গেলেও আমরা ক’জন প্রস্রাবের রঙের দিকে খেয়াল রাখি? বেশিরভাগই হয়তো না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের অন্দরের বহু খবরাখবর পাওয়া যায় মূত্রের রং দেখে। মূত্রের রং এবং ধরনই অনেক সময়ে বলে দেয় আপনি সুস্থ আছেন, নাকি কোনও রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। তাই এই আপাত তুচ্ছ বিষয়টিকে অবহেলা করা একেবারেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
সাধারণত জলের মতো স্বচ্ছ বা হালকা খড়ের মতো ফ্যাকাশে হলুদ রঙের প্রস্রাব স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, এই রং জানান দেয় যে আপনার শরীরে জলের পরিমাণ সঠিক রয়েছে এবং শরীর ভিতর থেকে সুস্থ আছে। তবে এর বাইরে রঙের যে কোনও বদলেই লুকিয়ে থাকতে পারে বিপদের সঙ্কেত।

কোন রঙে কীসের ইঙ্গিত?

১। গাঢ় হলুদ বা অ্যাম্বার: প্রস্রাবের রং স্বাভাবিকের চেয়ে গাঢ় হওয়ার মূল কারণই হল শরীরে জলের ঘাটতি বা ডিহাইড্রেশন। শরীর যখন পর্যাপ্ত জল পায় না, তখন মূত্র গাঢ় হয়ে যায়। এই রং দেখলে অবিলম্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা প্রয়োজন। তবে টানা এই অবস্থা চললে এবং জল পান করার পরেও রঙের পরিবর্তন না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
২। কমলা রং: প্রচণ্ড ডিহাইড্রেশন ছাড়াও লিভার বা পিত্তনালীর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে এটি। অনেক সময়ে জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেও প্রস্রাবের রং কমলা হতে দেখা যায়। কিছু বিশেষ ওষুধ সেবনের ফলেও এমনটা হতে পারে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
৩। লাল বা গোলাপি: এটি মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হতে পারে। প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি (হেমাচুরিয়া) সাধারণত এই রঙের কারণ। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর, মূত্রথলি বা প্রোস্টেটের সমস্যা, এমনকি ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগেরও লক্ষণ হতে পারে এটি। তবে, বেশি পরিমাণে বিট বা ব্ল্যাকবেরি জাতীয় ফল খেলেও সাময়িকভাবে এমনটা হতে পারে। তবে প্রস্রাবের রং লালচে দেখলেই অবহেলা না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া আবশ্যক।
৪। গাঢ় বাদামি বা কালচে: লিভারের গুরুতর রোগ, যেমন হেপাটাইটিস বা সিরোসিস, অথবা র‍্যাবডোমায়েলাইসিস (পেশি কোষ ভেঙে যাওয়ার রোগ)-এর মতো জটিল সমস্যার সঙ্কেত হতে পারে এই রঙের প্রস্রাব। কিছু ক্ষেত্রে তীব্র ডিহাইড্রেশনের ফলেও এমনটা হয়।
৫। সবুজ বা নীল: খুব বিরল হলেও কিছু ক্ষেত্রে এমন রং দেখা যায়। মূলত কিছু বিশেষ ওষুধ (যেমন অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট) বা খাবারে ব্যবহৃত রঙের কারণে এমনটা হতে পারে। তবে মূত্রনালীতে নির্দিষ্ট ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণের ফলেও এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
৬। ঘোলাটে বা ফেনা-যুক্ত: মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই-এর অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল ঘোলাটে প্রস্রাব। প্রস্রাবে ব্যাকটিরিয়া বা শ্বেত রক্তকণিকার উপস্থিতি বাড়লে এমনটা হয়। এছাড়া, প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিনের উপস্থিতির কারণে ফেনা হতে পারে, যা কিডনির সমস্যার প্রাথমিক ইঙ্গিত।

সুতরাং, প্রস্রাবের রং হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের আয়না। শরীরে জলের ঘাটতি হলে বা সাময়িক ভাবে কিছু খাওয়ার জন্য রঙের বদল স্বাভাবিক। কিন্তু যদি দেখেন, পর্যাপ্ত জল পান করার পরেও আপনার প্রস্রাবের রং অস্বাভাবিক থাকছে বা এর সঙ্গে অন্য কোনও উপসর্গ, যেমন- জ্বালা, ব্যথা বা দুর্গন্ধ থাকছে, তবে একটুও দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সামান্য সতর্কতা বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।