নিয়মিত শরীরচর্চা, সঠিক ডায়েট, কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে-সবকিছু ঠিক থাকলেও আজকাল অনেকেই হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে এক ‘অবহেলিত’ রক্ত পরীক্ষা। যা হল লিপোপ্রোটিন বা এলপি(এ)। সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এটি সচরাচর করা হয় না, কিন্তু এই পরীক্ষাই জানাতে পারে হৃদরোগের আসল ঝুঁকি কতটা ভয়ানক হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এলপি(এ) এক ধরনের ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ বা এলডিএ-এর মতোই কাজ করে, তবে আরও ক্ষতিকরভাবে। এটি রক্তনালির ভেতরে প্লাক জমাতে সাহায্য করে যা সময়ের সঙ্গে ধমনীর দেওয়াল শক্ত করে দেয় এবং রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হল, এই প্রক্রিয়া কোনও উপসর্গ ছাড়াই অনেক সময় নীরবে ঘটে। ফলে যাদের অন্য সব রিপোর্ট একেবারে ঠিক, তারাও হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এলপি(এ) মূলত জেনেটিক অর্থাৎ এটি বংশগতভাবে শরীরে থেকে যায়। তাই জীবনযাত্রা পরিবর্তন বা ডায়েট মেনে চললেও এটি সহজে কমানো যায় না। সাধারণভাবে ৩০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার-এর নিচে এলপি(এ) লেভেলকে নিরাপদ ধরা হয়। এর বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

এখনও পর্যন্ত এমন কোনও ওষুধ নেই যা সরাসরি এলপি(এ) কমাতে পারে। তাই যাদের এই মান বেশি, তাদের অন্যান্য ঝুঁকি ফ্যাক্টর যেমন রক্তচাপ, ব্লাড সুগার, ওজন, ধূমপান ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিয়মিত ইসিজি, ইকো ও কোলেস্টেরল প্রোফাইল পরীক্ষা করানো দরকার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্ট অ্যাটাক কেবল স্থূলকায়, ধূমপায়ী বা বয়স্কদের রোগ নয়। অনেক ফিট তরুণও এই লুকানো বিপদের শিকার হচ্ছেন। তাই একবার অন্তত এলপি(এ) পরীক্ষা করানো উচিত, বিশেষ করে যদি পরিবারের কারও হৃদরোগের ইতিহাস থাকে।

এই পরীক্ষাটি সাধারণ ল্যাবেই করা যায় এবং একবার করালেই যথেষ্ট, কারণ এর লেভেল সারা জীবন প্রায় একই থাকে। আগেভাগে ঝুঁকি চিহ্নিত করা গেলে অনেক বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। একটি সহজ রক্ত পরীক্ষাই হয়তো বাঁচাতে পারে আপনার জীবন।