সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বহু ভুল ধারণা ঘুরে বেড়ায়। অনেকেই মনে করেন, এই রোগ শুধু ধূমপায়ীদের হয়, কিংবা এটি বয়স্কদের সমস্যা। কিন্তু বাস্তবে তা একেবারেই নয়। বরং আধুনিক জীবনে প্রায় প্রত্যেকেরই সিওপিডি-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি কম বয়সী ও ধূমপান না করলেও ফুসফুসের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা পিছু ছাড়ে না। তাই সিওপিডি নিয়ে কয়েকটি ধারণা নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। 

ধূমপান সিওপিডি-র সবচেয়ে বড় কারণ হলেও এটাই একমাত্র নয়। বাড়িতে কাঠ বা কয়লায় রান্না, ধুলো-ধোঁয়ার পরিবেশ, নির্মাণস্থলে কাজ, যানবাহনের ধোঁয়া—এসবই ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে।বহু ভারতীয় মহিলা ঘরোয়া চুলোর ধোঁয়ার কারণে সিওপিডি-তে আক্রান্ত হন।

অনেকে ভাবেন ৫০–৬০-এর পরেই সিওপিডি হতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২৫–৩০ বছর বয়সিরাও এই রোগে আক্রান্ত। শৈশব থেকে দূষণের সংস্পর্শে থাকলে ফুসফুসের ক্ষয় জমে জমে বাড়তে থাকে এবং তরুণ বয়সেই রোগ ধরা পড়তে পারে।

অনেকেই মনে করেন সবুজ, শান্ত এলাকায় থাকলে ঝুঁকি নেই। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়ির মধ্যেই থাকা ধূপকাঠি, মশার কয়েল, গ্যাস জ্বালানোর ধোঁয়া, রান্নাঘরের ভাপ সবই ইন্ডোর দূষণ তৈরি করে। তাই শুধু বাইরে নয়, ঘরেও দূষণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

সিওপিডি রোগীর উপসর্গ আবহাওয়া ও দূষণের মাত্রা অনুযায়ী বাড়তে-কমতে পারে। শীতকালে ঠান্ডা বাতাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব ফুসফুসে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, ফলে কাশি, হাঁপানো, বুকে চাপ, শ্বাস নিতে কষ্ট বেড়ে যায়। তাই শীতকালে বেশি সতর্ক থাকা দরকার।

ইনহেলার অবশ্যই প্রয়োজনীয়, তবে এটিই শেষ কথা নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ফ্লু ও নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন নেওয়া, দূষণের সময় বাইরে যাওয়া এড়ানো, মাস্ক ব্যবহার, বাড়ির বায়ু চলাচল ঠিক রাখা, এবং কোনও অস্বাভাবিক শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো- এসবই সমান জরুরি।

বিশ্বজুড়ে মৃত্যু কারণের তালিকায় সিওপিডি দ্রুত উপরে উঠে আসছে। তাই ধূমপান না করলে কিছু হবে না, এই ধারণা ভুলে গিয়ে পরিবেশ, অভ্যাস ও ফুসফুসের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন থাকা প্রয়োজন।