আজকাল ওয়েবডেস্ক: কবি তো কবেই বলে গিয়েছেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ বাঙালির জীবনে দুধ এমনই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শৈশবে মায়ের হাতের দুধের গ্লাস, কৈশোরে হাড়ের জোর বাড়ানোর তাগিদ আর বার্ধক্যে শরীরকে চাঙ্গা রাখার প্রচেষ্টা- সবেতেই দুধের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। ক্যালসিয়ামের এই সহজলভ্য উৎসকে আমরা চিরকাল সুস্বাস্থ্যের প্রতীক হিসেবেই জেনে এসেছি। কিন্তু সম্প্রতি এক গভীর শঙ্কা অনেকের মনে বাসা বেঁধেছে। বিশেষ করে সমাজমাধ্যমে অনেকে বলছেন, এই দুধই নাকি কিডনিতে পাথর জমার অন্যতম প্রধান কারণ। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে বহু মানুষ ভয়ে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার থেকে দূরে থাকছেন। কিন্তু এই ভয়ের পিছনে বৈজ্ঞানিক সত্যতা ঠিক কতটা?
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
 
 কিডনিতে সৃষ্ট অধিকাংশ পাথরই ‘ক্যালসিয়াম অক্সালেট’ নামক রাসায়নিক যৌগ দ্বারা গঠিত। এই তথ্য থেকেই এক সহজ সমীকরণের জন্ম। দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, তাই বেশি দুধ পান করলে শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়বে, যা কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। এই ধারণাটি শুনতে আপাত ভাবে যুক্তিযুক্ত মনে হলেও, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান একে একেবারে ভ্রান্ত ধারণা হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। বরং একাধিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, বিষয়টি আসলে সম্পূর্ণ বিপরীত।
 
 আসল ঘটনাটি ঘটে আমাদের অন্ত্রে। আমরা যখন পালং শাক, বিট, বাদাম বা চকোলেটের মতো অক্সালেট-সমৃদ্ধ খাবার খাই, তখন সেই অক্সালেট রক্তে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখানেই দুধ বা দইয়ের ক্যালসিয়াম সতর্ক প্রহরীর মতো আচরণ করে। খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা এই ক্যালসিয়াম অন্ত্রের মধ্যেই অক্সালেটের সঙ্গে রাসায়নিকভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়। এই নবগঠিত ক্যালসিয়াম-অক্সালেট যৌগটি আকারে এতটাই বড় হয় যে তা অন্ত্রের প্রাচীর ভেদ করে রক্তে প্রবেশ করতে পারে না। ফলস্বরূপ, এটি মলের মাধ্যমে সোজা শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়। এর ফলে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছানোর সুযোগই পায় না অক্সালেট। অর্থাৎ, পরিমিত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ আসলে কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি কমায়।
বিপরীতে, খাদ্যতালিকা থেকে ক্যালসিয়াম বাদ দিলে অন্ত্রে অক্সালেটকে বাধা দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। তখন এই অক্সালেট বিনা বাধায় রক্তে মিশে কিডনিতে পৌঁছায় এবং ধীরে ধীরে পাথর রূপে জমা হতে শুরু করে। আসলে এখন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বহু মানুষ যা খুশি প্রচার করেই ভাইরাল হয়ে যাচ্ছেন। তার নেপথ্যে না আছে সত্যতা না আছে কোনও গবেষণা। ধর্ম থেকে রাজনীতি, বিজ্ঞান থেকে সংস্কার শুধু যা খুশি তাই রটিয়ে দিতে পারলেই হল। মানুষ নির্বিচারে তাই মেনে নিচ্ছেন। আর তার ফলেই এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে জনমানসে।
কিডনি স্টোনের আসল কারণগুলি কী কী?
 
 কিডনিতে পাথর হওয়ার নেপথ্যে একটি নয়, বরং একাধিক কারণ জড়িত।
 
 অপর্যাপ্ত জলপান: এটিই পাথর তৈরির প্রধান কারণ। শরীরে জলের পরিমাণ কমলে প্রস্রাবের ঘনত্ব বাড়ে, ফলে খনিজ লবণগুলি একে অপরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে পাথরের আকার নেয়।
 
 অতিরিক্ত লবণ ও প্রাণীজ প্রোটিন: খাবারে মাত্রাতিরিক্ত নুন (সোডিয়াম) কিডনিকে শরীর থেকে বেশি ক্যালসিয়াম বের করে দিতে বাধ্য করে, যা প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব বাড়ায়। একইভাবে, রেড মিটের মতো প্রাণীজ প্রোটিন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা পাথর গঠনে সাহায্য করে।
জিনগত কারণ: কারও পরিবারে কিডনিতে পাথরের সমস্যা থাকলে এই রোগের ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে।
অন্যান্য শারীরিক সমস্যা: হজমের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা বা কিছু হরমোনজনিত রোগ থেকেও কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
 
 সুতরাং, কিডনিতে পাথরের ভয়ে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার বর্জন করার কোনও প্রয়োজন নেই। এটি একটি ভিত্তিহীন আশঙ্কা মাত্র। বরং দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পরিমিত দুধ, দই বা ছানা রাখুন। বরং মনোযোগ দিন পর্যাপ্ত জলপানের দিকে। সেই সঙ্গে খাবারে নুনের ব্যবহার কমান এবং একটি সুষম জীবনযাত্রা মেনে চলুন। আর যদি আপনার বা আপনার পরিবারে কিডনিতে পাথরের ইতিহাস থাকে, তবে যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, প্রচলিত ধারণার উপর ভিত্তি করে নেওয়া সিদ্ধান্ত আপনার স্বাস্থ্যের জন্য হিতকর নাও হতে পারে।
