আজকাল ওয়েবডেস্ক: মনে পড়ে প্রফেসর শঙ্কুর সেই অদ্ভুত ওষুধের কথা? যা খেলে যে কোনও রোগ মুহূর্তে ভ্যানিশ হয়ে যায়? এই আবিষ্কারও যেন কোনও এক অজ্ঞাত জাদুকরের জাদুদণ্ড। সেই জাদুতে যা একসময় ছিল কল্পবিজ্ঞান, তা-ই হয়তো এ বার বাস্তব হওয়ার পথে। মেরুদণ্ডে মারাত্মক চোট পেয়ে যাঁরা চিরতরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, তাঁদের জীবনে আশার আলো দেখাচ্ছে স্টেম সেল থেরাপি। জাপানের কেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি দাবি করেছেন, ‘ইন্ডিউসড প্লুরিপটেন্ট স্টেম সেল’ নামক এক স্টেমসেল ব্যবহার করে তাঁরা গুরুতরভাবে আহত রোগীদের শরীর অনেকটাই সুস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ২৬৪৫ লিটার স্তন্য উৎপন্ন হয় বধূর শরীরে! 'রোজ রাতে ৩ ঘণ্টা..' বিপুল দুগ্ধ উৎপাদনের রহস্য ফাঁস করলেন নিজেই
আরও পড়ুন: ১২ জন স্ত্রী! বাচ্চা করাই নেশা! ১০২ সন্তানের বাবা হয়ে অবশেষে থামলেন ৬৮-র মুসা, কেন ক্ষান্ত দিলেন? কী বললেন এ যুগের ধৃতরাষ্ট্র?

গবেষক দলের প্রধান, অধ্যাপক হিদেয়ুকি ওকানোর নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়। আর তাতেই মিলেছে সাফল্য। মোট চারজন রোগীর উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। রোগীদের প্রত্যেকেরই আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে স্বাভাবিকভাবে সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় ছিল না বললেই চলে। সকলেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তাঁদের মধ্যে দু’জনের শরীরে এমন পরিবর্তন এসেছে, যা দেখে বিস্মিত হয়েছেন চিকিৎসকরাও। রোগীরা অসাড় হয়ে যাওয়া অঙ্গে সংবেদন তো ফিরে পেয়েছেনই, এমনকী হাত-পা নাড়ানোর ক্ষমতা এবং দৈনন্দিন কিছু কিছু কাজ করার শক্তিও ফিরে পেয়েছেন।

কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?
এই চিকিৎসার মূলে রয়েছে আইপি স্টেম সেল প্রযুক্তি। বিষয়টির আবিষ্কারক নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী শিনিয়া ইয়ামানাকা। এই প্রযুক্তিতে রোগীর শরীর থেকেই বিশেষ কিছু কোষ সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেটিকে গবেষণাগারে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি আদি বা অপরিণত স্টেম সেলে রূপান্তরিত করা হয়। স্টেম সেলের বৈশিষ্ট্য হল, এগুলিকে কৃত্রিম ভাবে শরীরের যে কোনও ধরনের কোষে পরিণত করা যায়।

কেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই কোষ থেকে ‘নিউরাল প্রিকারসার সেল’ বা স্নায়ুকোষের পূর্বসূরি একধরনের কোষ তৈরি করেছেন। এরপর এই ধরনের প্রায় ২৪ লক্ষ কোষ রোগীদের মেরুদণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই এই নতুন কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুতন্ত্রকে মেরামত করে সেগুলিকে ফের মস্তিষ্কের সঙ্গে জুড়ে দেবে।

ফলাফল কতটা আশাব্যঞ্জক?
শুধু আশাব্যঞ্জক বললে কম বলা হয়। গবেষকদের দাবি, এই ট্রায়ালের ফলাফল চমকপ্রদ। চিকিৎসার এক বছরের মধ্যে রোগীরা হুইলচেয়ার চালানো, নিজের হাতে খাবার খাওয়া বা হাল্কা জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করার মতো কাজ করতে পারছেন। অধ্যাপক ওকানোর কথায়, “আমরা প্রথমবার দেখলাম, সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরাও আংশিকভাবে নিজেদের কার্যক্ষমতা ফিরে পাচ্ছেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি বিরাট পদক্ষেপ।” বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও কারণে মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে পক্ষাঘাতের শিকার হন। যদি এই পদ্ধতি শেষ পর্যন্ত জনগণের কাছে সহজলভ্য করা যায়, তবে কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হবেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।