আজকাল থাইরয়েডের সমস্যা একেবারেই সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরুষদের তুলনায় মহিলারা এই রোগে বেশি ভোগেন। ওজন বেড়ে যাওয়া, চুল পড়া, ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা-সবই হতে পারে থাইরয়েডের অস্বাভাবিক হরমোন নিঃসরণের ফল। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন খাবারই নীরবে থাইরয়েড সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে।
পুষ্টিবিদদের মতে, থাইরয়েড রোগীরা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু সাধারণ খাবার রাখলে তাঁদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোন কোন খাবার পরিমিত খেলে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়, জেনে নিন-
১. ময়দার পাউরুটিঃ ময়দার পাউরুটি বা ময়দার তৈরি খাবারে ফাইবার কম এবং রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে এবং শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। পাশাপাশি গ্লুটেন-যুক্ত খাবার অনেকের থাইরয়েডে প্রদাহ বাড়াতে পারে।
২. আলু চিপস ও ভাজাভুজিঃ আলু চিপস বা অন্যান্য ভাজাভুজিতে থাকে প্রচুর লবণ, ট্রান্স ফ্যাট এবং কৃত্রিম ফ্লেভার। এসব উপাদান থাইরয়েডের জন্য দরকারী আয়োডিন শোষণকে বাধা দেয়। অতিরিক্ত নোনতা স্ন্যাকস শরীরে জলধারণের সমস্যা তৈরি করে, ফলে গলা ফুলে যায় ও হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৩. বাদামঃ চিনাবাদাম ও কিছু বাদামে থাকে গোইট্রোজেন নামক যৌগ, যা থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনকে বাধা দেয়। যদিও বাদাম পুষ্টিকর তবে থাইরয়েড রোগীরা প্রতিদিন বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়, অল্প পরিমাণই যথেষ্ট।
৪. বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ফুলকপিঃ এই ক্রুসিফেরাস শাকসবজিগুলো অত্যন্ত পুষ্টিকর হলেও কাঁচা অবস্থায় খেলে আয়োডিনের কার্যকারিতাকে বাধা দেয়। রান্না করলে বা স্টিম করলে এদের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটা কমে যায়। তাই থাইরয়েড রোগীদের এগুলো রান্না করে খাওয়া উচিত।
৫. কফিঃ নেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার পরপরই কফি খান, যা মারাত্মক ভুল। কফির ক্যাফেইন ওষুধের শোষণে বাধা দেয় এবং শরীরে কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে ক্লান্তি বাড়ায়। ওষুধ খাওয়ার অন্তত ৩০–৪৫ মিনিট পর কফি পান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
৬. সোয়া ও টোফুঃ সোয়াজাত পণ্য যেমন টফু, সয়া দুধ বা সয়া সস-এসব খাবারে থাকা ফাইটো-ইস্ট্রোজেন থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি ওষুধের কার্যকারিতাও কমে যায়। তবে সম্পূর্ণ এড়ানো নয়, মাপমতো খাওয়া ও ওষুধ খাওয়ার সময়ের ব্যবধান বজায় রাখাই ভাল।
থাইরয়েড রোগীরা সবকিছু বাদ না দিয়ে, বরং সঠিক মাত্রায় ও সঠিকভাবে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এছাড়াও পর্যাপ্ত ঘুম, হালকা ব্যায়াম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
