শরীর সুস্থ রাখতে জল অপরিহার্য। চিকিৎসকেরা প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শরীর সুস্থ ও নীরোগ রাখতে জলের বিকল্প নেই। তাই কম জল খেলে শরীরের ক্ষতি। আবার উল্টোটাও সত্যি। অর্থাৎ অতিরিক্ত জল পান করলেও শরীরের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন প্রাপ্ত বয়স্কের দিনে ৮ থেকে ১২ গ্লাস জল পান করা প্রয়োজন। গরমের দিনে তা বেড়ে যেতে পারে পরিমাণে। তবে অতিরিক্ত পান করলে কিন্তু শরীরের বিপদ বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে কোন কোন রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়, দেখে নেওয়া যাক।  
ভিটামিন-খনিজের ভারসাম্য নষ্টঃ ক্রমাগত জল খেতে থাকলে শরীরে ভিটামিন, খনিজ, ইলেকট্রোলাইটস এইসব গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। আর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পুষ্টি উপকরণের ঘাটতি হলে মাথা ঘোরানো, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেবে।

কিডনির কাজ ও অতিরিক্ত চাপঃ কিডনির মূল কাজ হল শরীরের রক্ত পরিশোধন করা এবং অতিরিক্ত বর্জ্য বার করে দেওয়া। এছাড়া জল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যও কিডনি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যদি একসঙ্গে অতিরিক্ত জল শরীরে প্রবেশ করে, তখন কিডনিকে তা সামলাতে বাড়তি চাপ নিতে হয়। এর ফলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।

হাইপোন্যাট্রেমিয়া: অতিরিক্ত জল পান করার ফলে সোডিয়ামের ঘাটতি তৈরি হলে তাকে বলা হয় হাইপোন্যাট্রেমিয়া। এই অবস্থায় মাথা ঘোরা, বমি ভাব, বিভ্রান্তি, মাথাব্যথা এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি কিডনি ও মস্তিষ্ক উভয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

কতটা জল যথেষ্ট? বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি মানুষের শরীরের প্রয়োজন ভিন্ন। বয়স, ওজন, দৈনন্দিন কাজকর্ম, জলবায়ু ও স্বাস্থ্য অনুযায়ী জলের পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত। সাধারণভাবে দিনে ২–৩ লিটার জল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যথেষ্ট, তবে কারওর শরীরে পরিশ্রম বা গরম আবহাওয়ার কারণে আরও বেশি জল প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, বেশি জল খাওয়া মানেই ভাল এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এককথায় 'স্মার্ট হাইড্রেশন' জরুরি। অর্থাৎ শরীর যখন তৃষ্ণার সংকেত দিচ্ছে তখন জল পান করা, এবং দৈনন্দিন অভ্যাসে ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত।

অতিরিক্ত জল শরীরের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় নয়, তেমনি ক্ষতিকরও হতে পারে। তাই জল খাওয়ার সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী জল পান করুন, কোনও রকম সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।