‌ আবু হায়াত বিশ্বাস, দিল্লি: বিহার ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে। শোচনীয় পরাজয়ের পর পর্যালোচনা বৈঠক বসছে দিল্লিতে। কাল, বৃহস্পতিবার দিল্লিতে দলের সদর দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা বৈঠক উত্তপ্ত হতে চলেছে। ভোট ভরাডুবির দায় কার, কেন শোচনীয় পরাজয় হল— প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে দল। একদিকে, রাজ্যের সিনিয়র নেতৃত্ব এবং অপরদিকে বিহারের পর্যবেক্ষক কৃষ্ণ আল্লাভারুর টিম জবাবদিহির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

 প্রবীণ নেতাদের একটি অংশের ক্ষোভ রয়েছে আল্লাভারুর টিমের ওপর। দলের ওই অংশটি মনে করছে,বিহার নির্বাচনে কংগ্রেসের খারাপ ফলের মূল দায় আল্লাভারু ও তার টিমের। তাদের অভিযোগ— টিকিট বণ্টন থেকে শুরু করে প্রতীক বরাদ্দ ও প্রচারের পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল আল্লাভারুর টিমের হাতে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের সরিয়ে তার টিম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিহারের অনেক প্রভাবশালী নেতাদের পুত্রের টিকিট কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কংগ্রেসের ওই শিবিরের যুক্তি প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচারের যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন কৃষ্ণ আল্লাভারু ও তাঁর টিম। ভোট ভরাডুবির দায়ও তাঁকে নিতে হবে।

অন্যদিকে, আল্লাভারুর টিমের যুক্তি বিহারে ভোটে হেরেছে কংগ্রেস, এটা ঠিকই। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিহারে বিনিয়োগ করেছে দল। ৬১ আসনে লড়ে মাত্র ৫ আসনে জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এবারে কংগ্রেসের ভাল ফল না করলেও লড়াই দিয়েছে। ফলে এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক ফল মিলবে বলে দাবি। কংগ্রেসের একটি শিবির আবার মনে করছে, বিহারে ভাল করতে হলে এবং দলের পুনরুত্থানের জন্য আরজেডি-র ওপর নির্ভরশীলতা ছাড়তে হবে। ভোটের আগে আরজেডি যেভাবে একেবারে শেষ মুহূর্তে চাপ সৃষ্টি করে আসন সমঝোতা করেছে, তা ছিল ‘ব্ল্যাকমেলিং’।ভবিষ্যতে সম্মানজনক সমঝোতা না হলে এই ধরনের জোট টেকসই হতে পারেনা। কালকের বৈঠকে কংগ্রেসের নির্বাচনী ওয়াররুমের দূর্বলতা নিয়ে ঝড় উঠতে পারে। প্রচার-পরিকল্পনা ছিল দুর্বল ও পক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে একটি অংশের দাবি। 

এদিকে, বিহারে ভোট পরাজয়ের কাঁটাছেড়া নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই কর্ণাটকে কংগ্রেসের টালমাটাল পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে ওই রাজ্যে। এমন পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। সূত্রের খবর, কংগ্রেস হাইকমান্ড ১ ডিসেম্বর সংসদ অধিবেশনের আগে মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যদিকে, এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করার পর উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারকে মেসেজে উত্তর দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। শিবকুমার অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলী নিয়ে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন।

 রাহুল গান্ধী একটি ছোট হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, শিবকুমারকে তিনি জানিয়েছেন, ‘দয়া করে অপেক্ষা করুন, আমি আপনাকে ফোন করব।’ এদিকে, দিল্লিতে কংগ্রেসের বিধায়কদের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে মঙ্গলবার কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, ‘হাইকমান্ডের সতর্কতার পরও বিধায়করা দিল্লি গিয়েছেন, এটা ওনাদের স্বাধীনতা। দেখা যাক তাঁদের কী মতামত। শেষ পর্যন্ত, সিদ্ধান্ত নেবে হাইকমান্ড।’ উল্লেখ্য, আগেই মল্লিকার্জুন খাড়গে জানিয়েছেন, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার হাইকমান্ডই নেবে।