আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোনও যন্ত্র খারাপ হয়ে গেলে যেমন তা সঠিকভাবে কাজ করে না, তেমনই শরীরের ভেতরে সামান্য গোলমাল হলেও শরীর তার নীরব সংকেত পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমরা অনেক সময়ই সেই সংকেতকে অবহেলা করি। চোখের তলায় কালি পড়া বা ডার্ক সার্কল তেমনই একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
আরও পড়ুন: নিজেই জানতেন না তিনি অন্তঃসত্ত্বা! মলত্যাগ করতে গিয়ে সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে


অনেকেই ডার্ক সার্কলকে শুধুমাত্র সৌন্দর্য-সংক্রান্ত সমস্যা ভেবে হালকাভাবে নেন। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, এর নেপথ্যে একাধিক শারীরিক কারণ কাজ করে। বিশেষ করে, চোখের তলায় কালি পড়া এবং শরীরে জল কমে যাওয়া বা ডিহাইড্রেশনের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

১. ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া
শরীরে যখন পর্যাপ্ত জল থাকে না, তখন ত্বক শুষ্ক ও পাতলা হয়ে পড়ে। চোখের নিচের অংশের ত্বক এমনিতেই খুব পাতলা, ডিহাইড্রেশনের কারণে তা আরও দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে ভেতরের রক্তনালীগুলি আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে এবং বাইরে থেকে কালচে বা গাঢ় দাগের মতো দেখা যায়।

২. রক্তনালীর জমাট বাঁধা
ডিহাইড্রেশন শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। জলশূন্যতার কারণে রক্তনালীগুলি সংকুচিত হতে পারে। এর ফলে চোখের নিচে ছোট ছোট রক্তনালীগুলিতে রক্ত জমে যেতে শুরু করে, যা ত্বকের নিচে গাঢ় দাগের মতো ফুটে ওঠে।

৩. শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি
ডিহাইড্রেশনের অন্যতম লক্ষণ হল দুর্বলতা ও ক্লান্তি। শরীরে পর্যাপ্ত জল না থাকলে অক্সিজেন পরিবহন ব্যাহত হয়, ফলে শরীর দ্রুত অবসন্ন হয়ে পড়ে। এই ক্লান্তি ঘুমের গুণমানকে খারাপ করে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাবে চোখের তলায় কালি পড়তে পারে।

তবে ডার্ক সার্কলের একমাত্র কারণ ডিহাইড্রেশন নয়। এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে আরও অনেক কারণ।

বংশগত কারণ: পরিবারে কারও যদি ডার্ক সার্কলের প্রবণতা থাকে, তবে তা পরবর্তী প্রজন্মেও দেখা দিতে পারে।

অ্যালার্জি: নাক বন্ধ হওয়া বা অ্যালার্জির কারণে চোখের নিচে ফোলা ভাব ও কালচে দাগ দেখা দিতে পারে।

আয়রনের অভাব: শরীরে লৌহের ঘাটতি হলে রক্ত ঠিকমতো অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে না, যা চোখের নিচের ত্বকে প্রভাব ফেলে।

অতিরিক্ত সূর্যালোক: সূর্যের আলোতে দীর্ঘক্ষণ থাকলে মেলানিন উৎপাদন বেড়ে যায়, যা চোখের চারপাশে গাঢ় দাগ ফেলে।

হরমোনজনিত সমস্যা: থাইরয়েডের মতো কিছু শারীরিক অসুখের সঙ্গেও ডার্ক সার্কলের সম্পর্ক রয়েছে।


সমাধানের উপায়
চোখের তলার কালি এড়াতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করা জরুরি। সাধারণত দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল পান করা উচিত, তবে শারীরিক কাজকর্ম ও আবহাওয়ার পার্থক্য অনুযায়ী এই পরিমাণ বাড়তে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, ডাল, ডিম ও মাংস খাদ্যতালিকায় রাখলে এই সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও চোখের চারপাশ পরিষ্কার রাখা, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম এড়ানো এবং সানগ্লাস ব্যবহার করাও কার্যকর হতে পারে। যদি ডার্ক সার্কল দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্য কোনও শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।

সবশেষে বলা যায়, চোখের নিচের কালি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট করে না, বরং শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সংকেতও বহন করে। তাই একে অবহেলা করবেন না। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে সময় মতো ব্যবস্থা নিলে ডার্ক সার্কলের সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।