আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডাক্তার কিংবা চিকিৎসকদের কথা উঠলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সঙ্গে একটি যন্ত্রের কথা মাথায় আসে। যন্ত্রটি হল চিকিৎসকদের গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপ। কিন্তু জানেন কি ১৮১৬ সালের আগে এই যন্ত্রটির কোনও অস্তিত্ব ছিল না। স্টেথোস্কোপ ছাড়াই রোগী দেখতেন চিকিৎসকরা। ১৮১৬ সালে ফরাসি চিকিৎসক রেনে লেনেক স্টেথোস্কোপ আবিষ্কার করেন এবং পরবর্তীকালে এই যন্ত্রটি চিকিৎসকদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়।
এ তো গেল আবিষ্কারকের কথা। কিন্তু অনেকেই এই আবিষ্কারের নেপথ্যের কারণটি শুনলে অবাক হবেন। চিকিৎসা শাস্ত্রের অতি প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রের আবিষ্কার রেনের ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে। স্টেথোস্কোপ আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত হৃদস্পন্দন শুনতে চিকিৎসকদের রোগীর বুকের উপর কান পাততে হতো। চিকিৎসা করার সময় এই বিষয়টি নিয়ে রেনের আপত্তি ছিল। তাঁর মনে হত এই ভাবে রোগীর দেহে কান পাতা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। পাশাপাশি এর মাধ্যমে রোগ-জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কাও বাড়ে। বিশেষ করে মহিলা রোগীদের বুকের উপর কান পাততে ঘোর আপত্তি ছিল রেনের।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
সেই সময় ফ্রান্সের প্যারিস শহরে নেকার এনফ্যান্টস ম্যালাডিস হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন রেনে। ভাগ্যের ফেরে ১৯১৬ সালে, সেই রেনেকেই ডাকা হয় এক স্থূলকায় তরুণীর হৃদযন্ত্রের সমস্যার চিকিৎসা করতে। ভারী মুশকিলে পড়েন তিনি। হঠাৎ করেই তাঁর মাথায় দ্রুত একটি বুদ্ধি খেলে যায়। তিনি জানতেন শব্দতরঙ্গ ঘনবস্তুর মধ্যে দিয়ে সহজে এবং দ্রুত প্রবাহিত হয়। সেই ধারণা থেকেই তিনি একটি কাগজের টুকরো মুড়িয়ে মুড়িয়ে একটি পাইপ তৈরি করেন। এরপর সেই পাইপের একটি প্রান্ত মহিলার বুকে ধরে অন্যপ্রান্তটি নিজের কানের মধ্যে গুঁজে নেন। আর তাতেই চমকপ্রদ ফল মেলে! স্পষ্ট রোগীর হৃদস্পন্দনের শব্দ শুনতে পান রেনে। এভাবেই জন্ম হয় পৃথিবীর প্রথম স্টেথোস্কোপের।
এরপর থেমে থাকেননি চিকিৎসক। কাগজের নলের পরিবর্তে পাতলা কাঠের নল ব্যবহার করে প্রথমবার এক কানে শোনার মত স্টেথোস্কোপ তৈরি করেন তিনি। নামটি তিনি পান দু’টি গ্রিক শব্দ থেকে। গ্রিক ভাষায় ‘স্টেথোস’ কথার অর্থ বুক আর ‘স্কোপেইন’ কথার অর্থ ‘দেখা’। শব্দ দুটি জুড়ে নতুন যন্ত্রের নাম তিনি রাখেন স্টেথোস্কোপ। অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থেই এই যন্ত্রের নামের অর্থ- যা দিয়ে বুক দেখা যায়।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
স্টেথোস্কোপ আবিষ্কারের পর সেই যন্ত্রটি ব্যবহার করে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য পান রেনে। আসলে তিনি এই যন্ত্রের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে রোগীদের হৃদস্পন্দন এবং ফুসফুসের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলেন। ফলত তাঁর রোগ নির্ণয় ছিল নিখুঁত। এমনকি এই যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি নিউমোনিয়া, এমফাইসেমা-র মতো ফুসফুসের-এর রোগের শ্রেণীবিভাগ করেন। এমনকী প্রথমবার ব্রংকাইটিস এবং সিরোসিসের মতো জটিল রোগের বর্ণনাও দেন। তাঁর এই বহুমাত্রিক আবিষ্কার চিকিৎসা শাস্ত্রে বিপুল খাতি এনে দেয় তাঁকে।
নতুন আবিষ্কৃত সেই যন্ত্রের কথা ছড়িয়ে পড়ে চিকিৎসা সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে। ক্রমেই বাড়তে থাকে এই যন্ত্রের ব্যবহার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় এর রূপ। যা আগে এক কান দিয়ে ব্যবহার করা হত এখন তা দুই কানেই ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি আধুনিক স্টেথোস্কোপ কেবলমাত্র বুকের শব্দ নয়, ধমনী ও শিরা সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে করতেও ব্যবহৃত হয়। একই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে প্রেসার মাপাও শুরু হয় একে কেন্দ্র করে। রক্তচাপ মাপার যন্ত্র তথা স্ফিগমোম্যানোমিটারেরও একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ স্টেথোস্কোপ। সবমিলিয়ে একজন চিকিৎসকের আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা কীভাবে গোটা চিকিৎসাশাস্ত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিতে পারে স্টেথোস্কোপের আবিষ্কার তারই নজির।
