আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিউ ইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহারান মামদানিকে ঘিরে আবারও শুরু হয়েছে আলোচনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরোনো একটি ভিডিও হঠাৎ করেই ফের ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায়—দীপাবলি উদযাপন অনুষ্ঠানে মামদানি নাচছেন এবং তাঁর হাতে বাঁধা রয়েছে হিন্দু ধর্মীয় আচার অনুযায়ী ব্যবহৃত ‘কালোয়া’।
এই ভিডিওটি নতুন নয়, তবে সম্প্রতি পুনরায় সামনে আসতেই নেটিজেনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তাঁর কবজিতে থাকা লাল-হলুদ রঙের সেই পবিত্র সুতোটির প্রতি। সাধারণত হিন্দু ধর্মীয় পূজা বা আশীর্বাদের উদ্দেশ্যে এই সুতো বাঁধা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত কনটেন্ট ক্রিয়েটর কোমল নাম্বিয়ার-এর সঙ্গে বলিউড গানের তালে আনন্দে নাচছেন। দুজনের হাতেই দেখা যায় মিষ্টি। আর সেই মুহূর্তেই বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে মেয়রের হাতে বাঁধা কালোয়া।
এটাই প্রথম নয় যখন জোহারান মামদানি প্রকাশ্যে তাঁর হিন্দু ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ তুলেছেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই তিনি নিউ ইয়র্ক শহরের ফ্লাশিং, কুইন্স এলাকায় অবস্থিত দুটি হিন্দু মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করেন। সেই সফরে তিনি বলেছিলেন, তাঁর মা—খ্যাতনামা ভারতীয়-আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নাইর—হিন্দু পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। ফলে ছোটবেলা থেকেই তিনি হিন্দু ধর্মের গল্প, মূল্যবোধ ও আচার সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছেন।
মন্দির সফরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মামদানি বলেন, “আমি আমার হিন্দু ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। আমি গর্বিত যে আমি মুসলিম, এবং একই সঙ্গে হিন্দু ঐতিহ্যের অংশও বটে। দুটোকেই একসঙ্গে ধরে রাখতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ বিষয়।” তিনি আরও জানান, নিজের মেয়রত্বকালে নিউ ইয়র্ক শহরের বহুভাষিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবেন এবং অভিবাসন–সংক্রান্ত ফেডারেল প্রয়োগমূলক পদক্ষেপের বিরোধিতা করবেন।
মামদানি বলেন, “আমি গর্বিত যে আমি এই শহরের প্রথম ভারতীয়-আমেরিকান মেয়র হতে চলেছি। আমি গর্বিত যে আমার মায়ের পরিবার হিন্দু। আর ছোটবেলা থেকেই, আমি মুসলিম হলেও, হিন্দুধর্মের গল্প, ঐতিহ্য, বিশ্বাস আর নানা প্রথা আমার শেখার অংশ হয়েছে।”
তাঁর নির্বাচনী জয়ের দিন ৪ নভেম্বর, সেদিনও তাঁকে ডান হাতে কালোয়া বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। এই ছোট্ট প্রতীকই আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে তাঁর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক শেকড়কে। নিউ ইয়র্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই মুহূর্তটি তাই বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। একজন মুসলিম মেয়র প্রার্থী, যিনি গর্বের সঙ্গে প্রকাশ্যে তাঁর হিন্দু-ঐতিহ্য ও পারিবারিক শিকড়ের কথা বলেন—এই বিরল মিশ্র পরিচয়কে বহু মানুষ উদার, সমন্বয়মূলক আমেরিকান সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
ভিডিওটির পুনরুত্থান তাই শুধুই সমালোচনার খোরাক নয়, বরং বহুসংস্কৃতির আবহে গড়ে ওঠা নিউ ইয়র্ক শহরের পরিচয়েরও প্রতিফলন। যেখানে জোহারান মামদানির মতো নতুন প্রজন্মের নেতারা ধর্ম, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের সীমানাকে অতিক্রম করে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করছেন।
