আজকাল ওয়েবডেস্ক: ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন উদ্বেগ। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরে রেকর্ডসংখ্যক রেবিস আক্রান্ত বাদুড় শনাক্ত হয়েছে শহরজুড়ে। এর পরপরই শহরবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে এলএ কাউন্টি ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ।


কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৬১টি বাদুড় রেবিস–পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। এটি গত এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর আগের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২০২১ সালে, যখন ৬৮টি বাদুড়ের শরীরে রেবিস ধরা পড়েছিল।


লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুন্টু ডেভিস এক বিবৃতিতে বলেন, “বাদুড় আমাদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা রেবিস ভাইরাস বহন করতে পারে। এই রোগটি একবার লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।”
স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেবিস আক্রান্ত বাদুড়ের সংখ্যা গত দশ বছর ধরে নিয়মিত ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। সাধারণত যেসব বাদুড় মানুষের বা পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে আসে, তাদের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ রেবিস ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি বছর গরমের শেষভাগে আক্রান্ত বাদুড়ের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। গত আগস্ট মাসেই ২৩টি রেবিস–পজিটিভ বাদুড় শনাক্ত হয়েছে শহরে।


ডেভিস আরও বলেন, “যদি কেউ মনে করেন যে তারা কোনো বাদুড়ের সংস্পর্শে এসেছেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বা সরাসরি স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বাদুড় বা অন্য কোনো বন্য প্রাণী ছুঁতে যাবেন না।” তিনি সতর্ক করে দিয়ে আরও জানান, যদি কেউ কোনো বাদুড়কে ঘরের ভেতরে, আঙিনায়, স্কুল–পার্কে বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অসুস্থ বা দিনের বেলা অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় অবস্থায় দেখতে পান, অথবা মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন, তবে তা অ্যানিম্যাল কন্ট্রোল কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে।


এবছর যে বাদুড়গুলোর শরীরে রেবিস ধরা পড়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই পাওয়া গেছে সান ফার্নান্দো ভ্যালির উপশহর এলাকায়, লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাউনটাউন অঞ্চলের বহু ভবনে, পার্ক–স্কুল–ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এবং বাড়ির পেছনের আঙিনায়। এ ছাড়া সান্তা ক্লারিটা ভ্যালি অঞ্চলে আগের বছরের মতোই বেশি সংখ্যক আক্রান্ত বাদুড় পাওয়া গেছে।


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাদুড়ের লালা বা শরীরের টিস্যুর মাধ্যমে রেবিস ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে—মুখ, চোখ, নাক অথবা কোনো ক্ষতস্থান দিয়ে। এমনকি বাদুড়ের কামড় খুব ক্ষুদ্র হওয়ায় অনেক সময় তা চোখে পড়েও না। তাই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, যদি কোনো বাদুড়কে ঘুমন্ত ব্যক্তি, শিশু বা পোষা প্রাণীর কাছাকাছি দেখা যায়, তবে তা সম্ভাব্য রেবিস এক্সপোজার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।


কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, পোষা প্রাণীদের জন্য রেবিস টিকাদান বাধ্যতামূলক এবং তা যথাসময়ে নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া বাসিন্দাদের উদ্দেশে পরামর্শ—কোনও অস্বাভাবিক আচরণকারী বা আহত বাদুড় দেখলে, নিজে হাত লাগিয়ে সরানোর চেষ্টা না করে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানোই সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি।


লস অ্যাঞ্জেলেসে রেবিস আক্রান্ত বাদুড়ের এই ঊর্ধ্বমুখী সংখ্যা শহরের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শহরজুড়ে সচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করার প্রস্তুতি চলছে।