২৪ নভেম্বর,সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বলিউডের কিংবদন্তি তারকা ধর্মেন্দ্র। ৮৯ বছর বয়সী এই অভিনেতা কয়েকদিন আগেই শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। ছয় দশকের দীর্ঘ কেরিয়ারে অ্যাকশন হিরো থেকে রোমান্টিক নায়ক- এমনকী অভিজ্ঞ চরিত্রাভিনেতা; সব ধরনের ভূমিকায় সাফল্য পেয়েছেন তিনি। তবে তাঁর নামের সামনে কখনও জুড়ল না ‘সুপারস্টার’ তকমা! এ এক অদ্ভুত ব্যাপার।


ধর্মেন্দ্র কেওয়াল কৃষণ দেওল- ২৪ বছর বয়সে, ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ দিয়ে শুরু করেন তাঁর যাত্রা। প্রথমদিকে ‘বন্দিনী’, ‘আই মিলন কি বেলা’, ‘কাজল’-এর মতো হিট ছবিতে সহ-অভিনেতার চরিত্রে নজর কাড়েন। এরপর ১৯৬৫ সালের যুদ্ধনির্ভর ছবি ‘হকিকত’ তাঁকে এনে দেয় প্রথম বড় সাফল্য। তারপর ‘ফুল অউর পাথর’ এবং ধর্মেন্দ্র হয়ে ওঠেন বক্স অফিসের নতুন ভরসা। ছয়ের দশকের শেষ থেকে  সাতের দশক পর্যন্ত একের পর এক হিট-‘অনুপমা’, ‘আদমি ঔর ইনসান’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, ‘সীতা ঔর গীতা’, ‘শোলে’, ‘লোফার’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘ধর্মবীর’ তাঁকে একেবারে বলি নায়কের শীর্ষ সারিতে পৌঁছে দেয়।


আটের দশকে তিনি ঝুঁকলেন অ্যাকশনধর্মী ছবির দিকে।  কম বাজেটের বহু হিটের নেতৃত্ব দিলেন তিনি। এই তালিকায় রয়েছে  ‘বদলে কি আগ’, ‘গুলামি’, ‘লোহা’, ‘এলান-এ-জঙ্গ’-এর মতো সব ছবি।  ধর্মেন্দ্র তখন যাকে বলে পুরোপুরি ‘মাস হিরো’।


৬৪ বছরের ফিল্মি কেরিয়ারে বক্স অফিসে ধর্মেন্দ্র দিয়েছেন ৭৫টি হিট ছবি যা হিন্দি সিনেমায় কোনও লিড অ্যাক্টরের সর্বোচ্চ সাফল্য। যাঁদের তিনি ছাড়িয়ে গেছেন, তাঁরা হলেন  -

অমিতাভ বচ্চন – ৫৭টি হিট 

রাজেশ খান্না – ৪২টি হিট

শাহরুখ খান – ৩৫টি হিট

সলমন খান – ৩৮টি হিট

 

তাহলে কেন কখনও ‘সুপারস্টার’ বলা হল না তাঁকে? কারণটা বহুস্তরীয়।  যখন ধর্মেন্দ্র কেরিয়ার শুরু করলেন, সেই সময়ে  দিলীপ কুমার ছিলেন নায়ক চূড়ামণি। সাতের দশকে ‘সুপারস্টার’ খেতাব চলে গেল রাজেশ খান্না তারপর অমিতাভ বচ্চন-এর মাথার মুকুটে। এছাড়া ধর্মেন্দ্রর বহু বড় হিট ছবিই ছিল মাল্টি-স্টারার বা দুই-নায়কের ছবি।  ‘শোলে’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, ‘ধর্মবীর’ এই তালিকায় অন্যতম।

আবার আটের দশকে তাঁর একক হিট থাকলেও সেগুলির পরিসর ছিল তুলনামূলক ছোট, যেখানে অমিতাভ বা ঋষি কাপুররা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন বড় বাজেটে। ধর্মেন্দ্রর বিপুল পরিমাণ ছবির সংখ্যায় ছিল ১৫০টি ফ্লপ!  যা কোনও বলিউড নায়কের জন্য দ্বিতীয় সর্বাধিক (মিঠুন চক্রবর্তীর পরে)। এই মিশ্র সাফল্যের হিসেবই তাঁকে কখনও ‘এক নম্বর সুপারস্টার’ হতে দেয়নি।

এ বিষয়ে ধর্মেন্দ্রর স্বীকারোক্তি ছিল স্পষ্ট। এই ‘বি-গ্রেড’ অ্যাকশন ছবিগুলো করতে তিনি কখনও লজ্জা পাননি। আটের দশকে দেওয়ায় এক সাক্ষাৎকারে  তিনি বলেছিলেন, “পঞ্চাশ পেরিয়ে আমি এখনও হেলিকপ্টার থেকে লাফাচ্ছি, এটাই তো আমার ফিটনেস! বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমি ছবি খুব ভালবাসি। জানি কিছু ছবি চলবে না, তবুও আমি সর্বোচ্চটা দিই। দর্শক এখনও আমাকে দৌড়াতে, লড়তে দেখতে ভালবাসে। তাহলে থামব কেন?”

নয়ের দশকে সিনিয়র সব চরিত্রে সরে গেলেন তিনি। নয়ের দশকের শেষ দিকে, যখন তাঁর দুই ছেলে- সানি ও ববি নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, ধর্মেন্দ্রও সিনিয়র চরিত্রে ফোকাস দেন। ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ (১৯৯৮) ছবিতে প্রথম তাঁর এই পরিবর্তন দেখা যায়। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি তাঁর  দুই ছেলের সঙ্গে ‘ইয়মলা পাগলা দিওয়ানা’ সিরিজ, ‘অপনে’-তে অভিনয় করেন।

জীবনের শেষ দিকেও পর্দায় দেখিয়েছিলেন নিজের দাপুটে উপস্থিতি। ৮০-র কোঠায় বয়সে পৌঁছেও তিনি পর্দায় সক্রিয়। ‘রকি ঔর রানি কি প্রেম কাহানি’, ‘তেরি বাতোঁ মে আইসা উলঝা জিয়া’ তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। আর আগামী মাসে মুক্তি পেতে চলেছে শ্রীরাম রাঘবনের ছবি ‘ইক্কিস’, যা এখন তাঁর শেষ ছবি হয়ে থাকবে।