কিছুদিন আগে শিরোনামে উঠে এসেছিল বিতর্কিত দক্ষিণী অভিনেতা শিবাজির নাম। নিজের নতুন ছবি ‘ধনডোরা’-র এক প্রচার অনুষ্ঠানে এসে নায়িকাদের পোশাক নিয়ে মন্তব্য করেই নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে তিনি। সেই মঞ্চেই তিনি বলেন, অভিনেত্রীদের উচিত নয় অতিরিক্ত খোলামেলা পোশাক পরা। বরং শাড়ি বা সম্পূর্ণ ঢাকা পোষাকেই তাদের বেশি মানায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, “সৌন্দর্য্য শরীর দেখানোর মধ্যে থাকে না। তা থাকে পুরো পোশাকের মধ্যেই আসল মর্যাদা থাকে”।  শিবাজির দাবি ছিল অনেকে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, মনে মনে এই ধরনের পোশাক পছন্দ করেন না। তাঁর কথায়, স্বাধীনতা মূল্যবান, তবে তারও সীমা আছে। তিনি নারীদের প্রকৃতির সঙ্গে তুলনা করে বলেন, মর্যাদা আর সম্মান সৌন্দর্যের সঙ্গে থাকা উচিত। অভিনেতার এহেন মন্তব্য শুনে নেটপাড়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। নড়েচড়ে বসে মহিলা কমিশনও।

 

নারীদের পোশাক সম্পর্কে এই বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে তীব্র বির্তকের পর অবশেষে তেলঙ্গানা রাজ্য মহিলা কমিশনের সামনে হাজির হলেন তিনি। শনিবার কমিশনের ডাকে উপস্থিত হয়ে শিবাজি তাঁর বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান এবং স্বীকার করেন যে তাঁর ওই  মন্তব্যটি অনুচিত ছিল। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, শিবাজি লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর মন্তব্য পুরোপুরি প্রত্যাহার করছেন এবং ভবিষ্যতে নারীদের মর্যাদা, সম্মান ও সংবেদনশীলতার বিষয়টি মাথায় রেখেই কথা বলবেন ও আচরণ করবেন।

 

দক্ষিণী অভিনেতাকে জেরার সময় কমিশনের চেয়ারপার্সন নেরেলা শরদা সোজাসাপটা প্রশ্ন তোলেন, নারীর ওপর হয়রানির কারণ হিসেবে কেন তাঁদের পোশাকের ওপর দোষ চাপানো হবে? তাঁর স্পষ্ট মন্তব্য, দায় এড়িয়ে পোশাকের দিকে আঙুল তুলে সমস্যার আসল জায়গাকে আড়াল করা যায় না।

 

উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর ‘ধনডোরা’ ছবির এক অনুষ্ঠানে অভিনেতা শিবাজি বলেন, অভিনেত্রীরা যেন ‘উন্মুক্ত পোশাক’ এড়িয়ে চলেন, শাড়ি  বা সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাকই নাকি নারীর সৌন্দর্যকে সম্মানজনক করে তোলে। সেই বক্তব্যের মধ্যেই ছিল এমন কিছু শব্দ, যা তিনি নিজেই পরে ‘অশোভন’ বলে স্বীকার করেন। ২৩ ডিসেম্বর এক্স-এ প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় তিনি ক্ষমাও চান।

 

তবে কমিশনের পর্যবেক্ষণ আরও কড়া। তাঁদের মন্তব্য, যে সব জনসমাগম অনুষ্ঠানে অভিনেত্রীরা বা নারী শিল্পীরা জনসমক্ষে হয়রানির শিকার হন, সেখানে পোশাকের বিচার না করে, প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে তাঁদের নিরাপত্তা। দায় নিতে হবে সেই ইভেন্ট আয়োজকদের, শক্তিশালী সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হবে, দোষীকে দায়ী করতে হবে। নারীর পোশাককে বারবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো শুধু অন্যায় নয়, সমাজের দায়িত্ববোধেরও ব্যর্থতা।

 

 

এই বিবৃতি প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক নারীর স্বাধীনতা, পোশাক ও নিরাপত্তা নিয়ে। এক পক্ষের প্রশ্ন, কবে সমাজ শিখবে সমস্যা নারীর পোশাকে নয়, মানসিকতায়। অন্যদিকে, শিবাজির ক্ষমাপ্রার্থনা কি সত্যিই বিতর্ক থামাতে পারবে, না কি আলোচনার আগুন আরও দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেবে, এখন নজর সেদিকেই।