কলকাতায় এক পড়ন্ত বিকেলে খুলে গেল বিনোদনের জানলা। শুরু হল ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ধনধান্য অডিটোরিয়ামে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশ-বিদেশের তারকা, পরিচালক, শিল্পী এবং চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কিংবদন্তি পরিচালক রমেশ সিপ্পি, যাঁর হাতে জন্ম নিয়েছিল ভারতীয় সিনেমার এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি— ‘শোলে’। বাংলার মাটিতে এত ভালবাসা ও সম্মান পেয়ে আপ্লুত সিপ্পি বলেন, “এমন গুণীজনদের পর কথা বলা মোটেই সহজ নয়। যা বলার ছিল, সবাই বলে দিয়েছেন। সকলকে এই উৎসবে স্বাগত জানাই, নিজেও খুব স্বাগত বোধ করছি। সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টির হাত ধরে আমরা পেয়েছি অসাধারণ সব বাংলা সিনেমা। শিল্প আর বাণিজ্যের দুর্দান্ত মেলবন্ধন এই শহর। আমার ছবিতেও সেই চেষ্টার প্রতিফলন রয়েছে। এখানকার সিনেমা আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করেছে। এই শহরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”
এই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলার গর্ব, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিচালক সুজয় ঘোষও। স্বভাবসিদ্ধ রসিকতায় তিনি বলেন, “আমি খুব ভাল বক্তৃতা দিতে পারি না, ক্যামেরার পিছনেই আমি ভাল।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উৎসবের উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে সুজয় বলেন, “কলকাতায় সিনেমা আমাদের কাছে কেবল বিনোদন নয়, এটা আমাদের আবেগ, স্মৃতি, পরিচয়। আমি এমন এক সময় কলকাতায় বড় হয়েছি, যখন বলা হত, ছয়ের দশকে জন্মালে সিনেমা তোমার জন্মগত অধিকার। আমাদের রক্তের গ্রুপও যেন এ বা বি নয়, বরং সি— সি ফর সিনেমা!”
সিনেমা যে সব সীমারেখা পেরিয়ে মানুষকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে, সেই বার্তাই পৌঁছে দেন পরিচালক। নিজের বিখ্যাত ছবি ‘কহানি’-র প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কহানি বানিয়ে বুঝলাম কলকাতা শহরটা নিজেই তো একজন অভিনেতা। এই শহরের রাস্তা, ট্রামলাইন, সারি সারি মুখ, সব কিছুই কথা বলে। মনে হয়, শুধু আমরা নই, কলকাতাও সিনেমাপ্রেমী।”
সুজয়ের কথায়, সিনেমা এখনও তাঁর কাছে মায়ের মতো। নস্টালজিয়া মিশে ছিল হারিয়ে যাওয়া সিঙ্গল স্ক্রিন হলগুলির কথাতেও।
উৎসবের প্রথম দিনই যেন আবার মনে করিয়ে দিল, কলকাতা আর সিনেমা একে অপরের পরিপূরক। আলো আর করতালির ভিতর দিয়ে শুরু হল নতুন এক যাত্রা, যেখানে সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, কলকাতার হৃদয়েরই অংশ।
