বাবা-মেয়ের সম্পর্কে যে সূক্ষ্ম সুতো থাকে তা মজবুত করার গল্প বলে প্রতীম ডি গুপ্তর ‘রান্নাবাটি’। মা হারা এক টিন-এজ মেয়ে এবং তাঁর বাবার মধ্যে দুরত্ব ঘোচানোর কথা-ই প্রধানত উঠে এসেছে এই ছবিতে। ৭ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে প্রতীম ডি.গুপ্তের ছবি ‘রান্নাবাটি’। ছবিতে দর্শক দেখেছে ঋত্বিক চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার এবং শোলাঙ্কি রায়ের এক অন্য সমীকরণ। বক্স অফিসে দুরন্ত ফল না করলেও মতের উপর রান্নাবাটি দেখে অখুশি নয় দর্শকমহল। তবে এই ছবি প্রেক্ষাগৃহে ৫০ দিনের কোঠা ছোঁয়ার আগে সরে যাচ্ছে, কারণ বড়দিনে আসছে দেবের প্রজাপতি ২, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-এর মতো একাধিক বড় বাজেটের বাংলা ছবি। তাদের জায়গা দেওয়ার জন্যেই ‘স্বাভাবিক নিয়ম’ মেনেই সরে যেতে হচ্ছে 'রান্নাবাটি'-কে। কিন্তু এখানেই চমক। মন খারাপ হলেও হতাশ নন পরিচালক প্রতীম ডি গুপ্ত। বরং তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এখন ভাইরাল, কারণ তাতে যেমন আছে যন্ত্রণার সৎ স্বীকারোক্তি, তেমনই আছে সহকর্মীর প্রতি নিখাদ শুভেচ্ছা। সমাজমাধ্যমে লেখা তাঁর শুভেচ্ছাবার্তা মন জয় করে নিয়েছে নেটপাড়ার। 

 

 

 

ঠিক কী লিখেছেন ‘রান্নাবাটি’ ছবির পরিচালক? 

 

“ ৪৮টা দিন। অর্ধশতকের থেকে মাত্র দু’দিন কম।

আজ রান্না বাটি–র প্রেক্ষাগৃহে যাত্রার শেষ দিন। ৫০ দিনে পৌঁছনোর খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু কাল থেকেই বড়দিনের রিলিজ—হল খালি করতেই হয়। এটাই সিনেমার স্বাভাবিক নিয়ম।

এই বিদায়ের মধ্যে একটা সুন্দর প্রতীকী ব্যাপার আছে। এক বাবা–মেয়ের গল্প সরে দাঁড়াচ্ছে আরেক বাবা–মেয়ের গল্পের জন্য—প্রজাপতি ২। ভাবতেই ভালো লাগে।

সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে এই ভেবে যে দেব—সুপারস্টার দেব—নিজের স্টারডম, শক্তি আর প্রভাব ব্যবহার করছেন এমন গল্পের পাশে দাঁড়াতে। সম্পর্কের গল্প, আবেগের গল্প, মানুষের গল্প। বাংলা সিনেমার আজ এই সাহসটাই দরকার—তার সবচেয়ে বড় তারকাদের কাছ থেকে।

আর এটা আমি বলছি শুধু তারকা দেবের ভক্ত হিসেবে নয়, মানুষ দেবের ভক্ত হিসেবেও। সাম্প্রতিক ইন্টারভিউগুলোতে ওকে শুনে সত্যিই ভালো লেগেছে। কী ভীষণ স্পষ্ট, সোজাসাপ্টা কথা। ইন্ডাস্ট্রি আজ কোথায় দাঁড়িয়ে, কোন দিকে যাচ্ছে, আর কী কী অদৃশ্য মেশিনারি এর বিরুদ্ধে কাজ করছে—সবটা নিয়ে এত খোলাখুলি কথা বলা সহজ নয়। কোনো ঘুরপথ নেই, কোনো পালিশ নেই—শুধু সত্যি কথা।

এই রকম স্বচ্ছতা খুব দরকার। এই রকম সততা আরও বেশি দরকার।”

(পোস্টের বানান অপরিবর্তিত রাখা হল। )

 

 

 

একই সঙ্গে দেবের সাম্প্রতিক খোলামেলা বক্তব্য, ইন্ডাস্ট্রির বাস্তব ছবি তুলে ধরার সাহস ও স্পষ্টতারও প্রশংসা করেন প্রতীম। তাঁর মতে, এই স্বচ্ছতাই আজ সবচেয়ে প্রয়োজন বাংলা ছবির জন্য। সব মিলিয়ে, ‘রান্নাবাটি’ হয়তো বক্স অফিসের মাইলস্টোন ছুঁতে পারেনি, কিন্তু তার মানবিকতা, পরিচালক প্রতীমের স্পষ্টতা এবং সহ-শিল্পীর প্রতি সম্মান এই মুহূর্তে সেটাকেই অনেকেই দেখছেন বাংলা সিনেমার জন্য এক ইতিবাচক সংকেত হিসেবে।