লোকসঙ্গীতের সহজিয়া ধারাকে ঘিরে আয়োজিত ‘সহজিয়া ফাউন্ডেশন’-এর ১৩তম উৎসব যেন হয়ে উঠল এক বহমান গানের যাত্রা, লোক-ঐতিহ্য ও গবেষণার এক মহা উৎসব। আর এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বাঙালির নগর-বেদুইন, কিংবদন্তি গীতিকার-সুরকার-গায়ক রঞ্জন প্রসাদ, যিনি এবছর পেয়েছেন ‘সহজিয়া সম্মান ২০২৫’।

 

ছয়ের দশকে তাঁর লেখা কিংবদন্তি ভাবানুবাদ “পথের প্রান্তে ওই সুদূর গাঁয়, যেথা সময় থমকে থাকে বটের ছায়ে” - হ্যারি বেলাফন্টের জনপ্রিয় জামাইকান ফেয়ারওয়েল-এর বাংলা রূপ, যা আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মের মুখে মুখে ফেরে।

 

চিত্তরঞ্জন দাশের বংশধর, কালী দাশগুপ্ত ও হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ছাত্র এই বহুমুখী শিল্পী শুধু গান সৃষ্টি করেননি, বাংলার লোকঐতিহ্য বিষয়ে করেছেন বিস্তৃত গবেষণা মৌলিক গান, অনুবাদ, প্রবন্ধ, শিশু-গল্প সব ক্ষেত্রেই তিনি আজও সমান সক্রিয়, প্রায় আশি বছর বয়সেও যেন এক চিরযৌবন স্রষ্টা।

 

 

 

রবীন্দ্র সদনের পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে একে একে মঞ্চ আলোকিত করেন শুভেন্দু মাইতি, স্বপন বসু, গৌতমদাস বাউল, লক্ষ্মণদাস বাউল, রীণা দাসী, সিধু, জয়তী, ঋতিকা, পিলু, অর্কদীপ, তানি-মুনি, হৃদিস্রোতা, শোভনসুন্দর, মৌনীতা, পিয়ালী এবং সহজিয়ার কর্ণধার দেব চৌধুরী।এ দিন বাংলার ফকিরি ধারার এক গুরুত্বপূর্ণ সাধক গায়ক মনসুর ফকির–ও সম্মানিত হন ‘সহজিয়া সম্মান ২০২৫’-এ। তাঁর উপস্থিতিতে উৎসব পায় আরও গাঢ় সুরের আবরণ।

 

দেব চৌধুরীর নির্দেশনায় ‘সহজ সুরের পাঠশালা’-র ছাত্র-ছাত্রীদের গড়া সুরের কোলাজ ‘ভবময়ীর রূপ দেখিয়া’ এবং ‘একবার নাচো নাচো গো শ্যামা’ দর্শককে মুগ্ধ করে। মুর্শিদাবাদ থেকে আগত ‘অঘোরী নৃত্য’ দলের পরিবেশনা সন্ধ্যাকে দেয় এক আধ্যাত্মিক ছোঁয়া।

 


উৎসব আরও ঝলসে ওঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত জি-বাংলা সারেগামাপা-র নির্দেশক ও জনপ্রিয় চিত্রপরিচালক অভিজিৎ সেন, পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিশিষ্ট আধিকারিকদের উপস্থিতিতে।

 

শেষে মঞ্চে মনসুর ফকিরের ‘মিলন’ আর সেই অনাবিল সুরের পরেই ধীরে ধীরে আলো-ছায়ার ভিড়ে হারিয়ে গেলেন রসিক দর্শকরা। পরের বছরের অপেক্ষায় রইল শহর, লোকসঙ্গীত-প্রেমীরা।