স্তন ক্যানসারের সঙ্গে নিজের লড়াইয়ের কথা ২০২২ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আনেন অভিনেত্রী মহিমা চৌধুরী। সেই থেকে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন মঞ্চে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরছেন তিনি। সম্প্রতি ‘ইয়ং উইমেন ব্রেস্ট ক্যানসার কনফারেন্স ২০২৫’-এর মঞ্চে এসে তিনি কার্যত সতর্কবার্তা দিলেন সকল নারীদের। জানান, কোনও উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ২০২২ সালে স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। সেই কারণেই তিনি প্রতিটি নারীকে প্রথম থেকেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

মহিমা বলেন, “আমার কোনও উপসর্গ ছিল না। আমি স্তন ক্যানসারের কোনও স্ক্রিনিং করাতে যাইনি, শুধু বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলাম। আমার একেবারেই ধারণা ছিল না যে আমার ক্যানসার হয়েছে। এই রোগকে নিজে থেকে প্রাথমিক অবস্থায় চেনা সম্ভব নয়— শুধুমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে তা ধরা যেতে পারে। তাই নিয়মিত চেক-আপ করালে খুব তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা সম্ভব এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়।”

তিনি জানান, রোগ নির্ণয়ের মুহূর্তটি ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। এখন নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে এনে অন্যদের সতর্ক করতে চান তিনি। কারণ ক্যানসার শরীরে বাসা বাঁধলেও অনেক সময় শরীরে কোনও অসুস্থতা অনুভূত হয় না। মহিমার কথায়, উপসর্গের জন্য অপেক্ষা করলে দেরি হয়ে যেতে পারে। তাই সচেতনতা এবং দ্রুত পরীক্ষাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

অভিনেত্রী আরও মন্তব্য করেন, গত কয়েক বছরে ভারতে ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন এসেছে। তাঁর কথায়, “গত তিন-চার বছরে দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন অনেক জেনেরিক ওষুধ অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। ফার্মা কোম্পানিগুলোর সহায়তাও আগের তুলনায় অনেক বেশি, পাশাপাশি সচেতনতার পরিমাণও বেড়েছে… অন্য রোগীদের লড়াইয়ের গল্প শুনে আমি প্রচুর অনুপ্রেরণা পেয়েছি।”

সামনে তাঁর নতুন ছবি ‘দুর্লভ প্রসাদ কি দুসরি শাদি’ মুক্তির অপেক্ষায়। আর সাম্প্রতিক মুক্তি পাওয়া ‘দ্য সিগনেচার’ দিয়ে তিনি আবারও পর্দায় ফিরেছেন। তবে তাঁর মূল বার্তা স্পষ্ট— স্বাস্থ্যই আগে, আর সচেতনতা সময়মতো প্রাণ বাঁচাতে পারে।

১৯৯৭ সালে ‘পরদেশ’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় মহিমা চৌধুরীর। বিপরীতে শাহরুখ খান। এরপর ‘দাগ: দ্য ফায়ার’, ‘ধড়কন’, ‘লজ্জা’-সহ একাধিক জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। পরে ‘দোবারা’ এবং ‘ডার্ক চকোলেট’-এই দেখা যায় তাঁকে। দীর্ঘ বিরতির পর ‘দ্য সিগনেচার’ দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর প্রত্যাবর্তন।


মহিমার লড়াই আজ অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। রোগ ধরা পড়ার পর তিনি নিজেকে শুধুই চিকিৎসার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং প্রকাশ্যে এসে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যাতে আরও বহু নারী সতর্ক হন, নিয়মিত পরীক্ষা করান এবং প্রয়োজন হলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। ব্যক্তিগত কষ্টকে শক্তিতে রূপান্তর করে মহিমা শুধু নিজের জীবনে নতুন আলো ফিরিয়ে আনেননি, বরং সমাজে সচেতনতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাঁর এই সাহস, স্বচ্ছতা এবং ইতিবাচকতা তাঁকে সত্যিই একজন যোদ্ধার মর্যাদা দিয়েছে।