আজকাল ওয়েবডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (জেকেপিডিপি) প্রধান মেহবুবা মুফতির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত হওয়ার পর, কেন্দ্রীয় সরকারই দেশের ভেতরে “বিষাক্ত পরিবেশ” তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। শ্রীনগরে একটি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুফতি দাবি করেন, সরকারের দমন-পীড়ন ও আতঙ্কের পরিবেশ কাশ্মীরি যুবকদের “বিপথে ঠেলে দিচ্ছে”।

“কাশ্মীরের সমস্যার প্রতিধ্বনি লালকেল্লার সামনে” — মুফতি

মুফতির অভিযোগ, কাশ্মীরের বাস্তব সমস্যাগুলো ঢেকে রাখতে সরকার সবকিছু স্বাভাবিক বলে তুলে ধরছে, কিন্তু সেই সমস্যাই এবার রাজধানীর বুকে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, “একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। সেই পরিবেশই কাশ্মীরি যুবকদের পথভ্রষ্ট করছে এবং বিপজ্জনক পথে ঠেলে দিচ্ছে। এত পড়াশোনা করার পর এমন কাজে যুক্ত হওয়া ভুল। সরকার কাশ্মীরে হাহাকার তৈরি করেছে। প্রতিদিন অত্যাচার চলছে। তারা বলে সব ঠিক আছে, কিন্তু লালকেল্লার সামনে কাশ্মীরের সমস্যার প্রতিধ্বনি শোনা গেল।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, দেশে বিভাজনের রাজনীতি জাতীয় নিরাপত্তার ওপর ভারী হয়ে উঠছে। “হিন্দু-মুসলিম করে ভোট পাওয়া যায়, কিন্তু দেশ কোন পথে হাঁটছে তা কি ভাবা হচ্ছে? কেন্দ্রের উচিত বুঝে চলা যে দেশ ক্ষমতার চেয়ারের থেকেও অনেক বড়,” বলেন মুফতি।

তদন্তকারী সংস্থার দাবি: ‘হোয়াইট-কলার’ সন্ত্রাস মডিউল

তদন্তকারীরা বলেছেন, এই বিস্ফোরণ কোনও  সাধারণ সন্ত্রাসী হামলা নয়, এটি ছিল এক ধরনের ‘হোয়াইট-কলার’ সন্ত্রাস মডিউল, যেটি সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ ধরে  ফেলেছে। মডিউলটির নেতৃত্বে ছিলেন কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত যুবক — ডা. মুজাম্মিল শাকিল এবং ডা. আদিল রাথার, যাদের গ্রেপ্তারের পর বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত করা হয়।

লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরিত সাদা হুন্ডাই i20 গাড়িটির চালক ছিলেন কাশ্মীরের বাসিন্দা উমর মহম্মদ। সূত্রের দাবি, সঙ্গীদের গ্রেপ্তার ও ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পর আতঙ্কে উমর ঘটনাস্থলে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থাকতে পারেন। বিস্ফোরণটি ঘটে সেই দিনই, যেদিন দিল্লি থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে হরিয়ানার ফরিদাবাদে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া যায়।

বিজেপির পাল্টা আক্রমণ: ‘দায়সারা রাজনীতি’

মুফতির অভিযোগের পর প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেনি বিজেপি। দলের শীর্ষ নেতা রভিন্দর রায়না বলেন, “এটি নিন্দনীয়। একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়। তিনি পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন। মোদি সরকার কাশ্মীরের জন্য যা করেছেন, তা নজিরবিহীন।”

আরেক নেতা অভিজিত জসরোটিয়া বলেন, “মেহবুবা মুফতির মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে এমন কথা বলছেন, যখন কাশ্মীরের যুবকদের পাশে দাঁড়ানোর সময়।”

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু: নিরাপত্তা নাকি রাজনীতি?

রেড ফোর্ট বিস্ফোরণের তদন্ত এগোতে থাকলেও, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তীব্র হচ্ছে। মুফতির অভিযোগ দেশের ভেতরে কাশ্মীর নীতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। অন্যদিকে বিজেপি দাবি করছে, বিরোধীরা সন্ত্রাসবাদ নিয়ে “রাজনৈতিক লাভ” তুলতে চাইছে।
ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে, তবে রাজনৈতিক তরঙ্গ ইতোমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীর থেকে দিল্লি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।