আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (SIR)–এর কাজ নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষের জেরে সোমবার কেরালাজুড়ে এসআইআরের সব দায়িত্ব থেকে বিরত থাকবেন Booth-Level Officer–রা। কান্নুরে এক BLO–র আত্মহত্যার ঘটনার পর তিনটি বড় সরকারি কর্মচারী সংগঠন এই বর্জন ও প্রতিবাদের ঘোষণা করে।

স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যান্ড টিচার্স অ্যাকশন কাউন্সিল, জয়েন্ট কমিটি অব টিচার সার্ভিস অর্গানাইজেশনস এবং কেরালা এনজিও অ্যাসোসিয়েশন এক যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, এসআইআর প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে BLO–দের ওপর “অস্বাভাবিক, অবাস্তব এবং অসহনীয় চাপ” সৃষ্টি হয়েছে। আগামী স্থানীয় সংস্থার নির্বাচনকে সামনে রেখে অতিরিক্ত দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে, যা তাদের কর্মপরিবেশকে আরও কঠোর করে তুলেছে। এর প্রেক্ষিতেই সোমবার রাজ্যের সব BLO কাজ থেকে বিরত থাকবেন।

সংগঠনগুলি জানিয়েছে, সোমবার শুধু কাজ বর্জন নয়—রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় তিরুবনন্তপুরমে এবং সব জেলার কালেক্টরেট চত্বরেও বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দল ও কর্মচারী সংগঠন বহুবার এসআইআর স্থগিত করার অনুরোধ জানালেও নির্বাচন কমিশন তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং স্বল্প সময়ের মধ্যে অত্যধিক লক্ষ্য পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৩ বছর আগে প্রকাশিত ভোটার তালিকা সংশোধনের নাম করে BLO–দের দিনরাত কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “এই অমানবিক চাপ BLO–দের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।” এনজিও অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, তৎক্ষণাৎ স্বস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে।

এই বয়কটের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে কান্নুরের পায়্যন্নুরের ৪৪ বছর বয়সি BLO অনীশ জর্জের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। রবিবার তাকে বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এসআইআর–সংক্রান্ত প্রচণ্ড মানসিক চাপেই তিনি চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

এই ঘটনার পর বিরোধী নেতা ভি. ডি. সাথেসন দায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, BLO–দের ওপর “অস্বাভাবিক ও অমানবিক মাত্রার কাজের চাপ” চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে শুরু হওয়া বর্তমান এসআইআর প্রক্রিয়া এমন মাত্রায় কঠোর করা হয়েছে যে তা বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির চেয়েও বেশি শ্রমসাধ্য।

কর্মচারী সংগঠনগুলির মতে, BLO–দের স্বাভাবিক কর্মঘণ্টা, মানসিক চাপ এবং নিরাপত্তা নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট না হলে রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া আরও সংকটে পড়তে পারে। রাজ্যজুড়ে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাতেও গত ৪ নভেম্বর রাজ্য জুড়ে এসআইআর শুরুর পর এই নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট তিনজন ব্যক্তি আত্মঘাতী হলেন এবং আরও দু'জন ব্যক্তি এসআইআর আতঙ্কে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে মৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এসআইআর শুরুর প্রথম দিনই কান্দি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাগডাঙ্গা এলাকায় মোহন শেখ নামে বছর পঞ্চান্নর এক কৃষক বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন। ঘটনার দিন ওই পরিবারে তরফ থেকে দাবী করা হয় ২০০২-এর ভোটের তালিকায় মোহনের নাম না থাকায় তিনি আতঙ্কে ছিলেন এবং সেই কারণেই বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। 

এদিকে বাংলায় এসআইআর শুরু হওয়ার আগে অভিষেক ব্যানার্জি এক ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, এনুমারেশন ফর্মের কাজ করার সময় এক মিনিটও বিএলও-দের একা ছাড়া যাবে না। বুথ ভিত্তিক এজেন্টদের উদ্দেশ্যে অভিষেকের নির্দেশ, এসআইআর প্রক্রিয়া চলাকালীন বিএলও-দের ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতে হবে। এক মিনিটও তাঁদের একা ছাড়বেন না। কোনও বিএলও যেন অনৈতিক কাজ না করতে পারেন, তা দেখার দায়িত্ব বিএলএ-দের। উল্লেখ্য, এসআইআর শুরু হওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনের তরফে বিএলও-দের সঙ্গে বিএলএ-১ থাকতে পারতেন।

কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল এই বুথ লেভেল এজেন্টদের হতে হবে সেই সংশ্লিষ্ট বুথের ভোটার। কিন্তু সেই নির্দেশিকায় সব বুথে সব দলের এজেন্ট দেওয়া যাচ্ছিল না। সে কারণে পরবর্তীতে কমিশনের তরফে আরও একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। সেখানে জানানো হয়, বিএলও-২ এর কথা। জানানো হয়, বিএলএ-২ যাঁরা হবেন তাদের সেই বুথের নয়, সংশ্লিষ্ট বিধানসভার ভোটার হলেই হবে।