দেখতে দেখতে সাতটা দিন শেষ। যেন এক বিশাল সিনেমা-যজ্ঞ সম্পন্ন হল। সমাপ্ত হল ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (KIFF 2025)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এবার সঞ্চালক হিসেবে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে দেখা গেলেও সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যায়নি। এদিন অনুষ্ঠানে সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ করেই মঞ্চে উপস্থিত হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! 

 

 

সমাপ্তি অনুষ্ঠানে অতিথিঅভ্যাগতদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আমরা সবাই মিলে প্রচুর পরিশ্রম করেছি এই চলচ্চিত্র উৎসবকে আপনাদের সামনে সুচারুভাবে পেশ করার জন্য।  আপনারা এই উৎসবজুড়ে যেভাবে আমাদের পাশে ছিলেন, তাতে আমরা সম্মানিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের ধন্যবাদ জানাতেই আজ এখানে চলে এলাম। তবে যেন ভেবে বসবেন না, এই একবার এসেই আপনাদের ছুটি! আপনাদের আগামী বছরেও আসতে হবে আমাদের এই কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। তবে আপনারা সঙ্গে একটা লক্ষ্য নিয়ে আসবেন, স্বপ্ন নিয়ে আসবেন। ‘ভিশন’-এর পাশাপাশি যেন আপনাদের ‘মিশন’-ও থাকে। আমাদের বাংলায় প্রতিভার কমতি নেই। গুণী শিল্পীদের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের কোনও কমতি নেই আমাদের রাজ্যে। ছবির মতো গ্রাম থেকে চোখ জুড়োনো নদী, জলাশয় যেমন আছে, তেমনই নিবিড় বন থেকে হিমালয় আছে আমাদের। আছে নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত। সবকিছু আপনারা আমাদের বাংলায় পাবেন। শুধু আপনাদের আসতে হবে এখানে। আপনার আমাদের ছবি নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, আমাদের রাজ্যের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাজ দেখুন। একটা কথা বলি, হলিউডের নাম তো বিশ্বখ্যাত। বলিউডেরও নামডাক সারা বিশ্বজুড়ে কারণ তাদের ব্যবসা তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। কিন্তু মনে রাখবেন, বাংলা কিন্তু ভারতের সংস্কৃতির পীঠস্থান।” 


পরিকল্পনা ভাগ করে নিয়ে তিনি বলেন, “তাই আপনারা যদি টলিপাড়ার সঙ্গে হাত মেলান, তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানের সব ছবি উপহার দিতে পারবে। আমি জোর গলায় বলছি, আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সেই ক্ষমতা আছে। তবে হ্যাঁ, তার জন্য তাদের পাশে আপনাদের দাঁড়াতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে, অনুপ্রেরণা দিতে হবে। চলুন না, আমরা একসঙ্গে মিলে সেই কাজটা করি। আমরা একসঙ্গে হাত মেলালে, তা হবেই। আরে, আপনারা আমরা তো পরস্পরের ভাই-বোনের মতোই।  গোটা পৃথিবীটাই তো একটা বাড়ির মতো। হতে পারে আলাদা দেশ, কেউ দেখতে আলাদা, কারও গায়ের রং আলাদা...আর এটাই তো আমাদের সংস্কৃতি। বাংলার সংস্কৃতি -বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। আমরা ভাঙ্গনের নীতিতে বিশ্বাস করি না, বিশ্বাসী আমরা ঐক্যের নীতিতে। আমরা একটা শান্তিপূর্ণ পৃথিবী দেখতে চাই। আমরা শান্তি, বন্ধুত্ব, পারস্পরিক সৌহার্দ্যতেই বিশ্বাসী। তাই বিদেশে থাকলেও, আপনারা আমাদের বন্ধু। আমাদের অতিথি। না, অতিথিও না। আমাদের কাছে আপনারা ভাই-বোনের মতো! আপনাদের অনুরোধ, আপনারা নিজেদের দেশের মানুষকে আমাদের ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাবেন। জানাবেন, আপনার দেশবাসীও আমাদের বাংলার ভাই-বোনের মতো।”


কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তিনি বলেন,“আমি বিশ্বাস করি, এই কলকাতা সফরে আপনারা আনন্দ পেয়েছেন। আমাদের বাংলার মানুষ, কলকাতার মানুষরা যেমন মিষ্টি তেমন অতিথিপরায়ণ।  তাঁরা সবরকম মানুষকে ভালবাসেন। আর যদি আমাদের কোনও ব্যবহার অজান্তে আপনাদের কষ্ট দিয়ে থাকে, সেই ত্রুটির জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে, অনেক সময় বড় কিছু আয়োজন করলে ছোট্ট-ছোট্ট বিষয়ে ত্রুটি থেকে যেতে পারে। তাই, আপনাদের কাছে আমার নিবেদন সেই ছোট্ট ছোট্ট ভুল মনে রাখবেন না। কারণ আপনারা যে আমাদের এখানে এসেছেন, সেটাই আমাদের কাছে অত্যন্ত সম্মানের। আরও ভাল করে বললে, আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। ঠিক সেই কারণেই আজ আমি এই অনুষ্ঠানে চলে এলাম আপনাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে। আপনাদের সকলকে - ৩৯টি দেশ থেকে আসা সম্মানীয় অতিথিদের, জুরির দলকে। ধন্যবাদ জানাই যাঁরা এই উৎসবে সেরা হলেন, ধন্যবাদ জানাই তাঁদেরও যাঁরা এই উৎসবে সেরার শিরোপা পেলেন না। তাঁরা কিন্তু ভাববেন না খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা, কারণ তাঁদের ছবি যে প্রদর্শিত হল এই উৎসবে। এত মানুষ দেখলেন সেসব ছবি। আর আমাদের কলকাতা তো ছবির জন্য পাগল। ছবি, নাটক-এর খুব একনিষ্ঠ দর্শক আমরা। তা, সেটা কি কোনও পুরস্কারের থেকে কম?”

কথাশেষে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “তাই আপনাদের কথা দিচ্ছি, আগামী বছর আরও বড় করে, বর্ণাঢ্যভাবে এই কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করব আমরা।”