নাদ-ধ্বনি-কিঙ্কিনি — এই ত্রয়ীর মিলনের আসরে আরও এক অনন্য মিলন দেখলেন দর্শকরা। দেখলেন গুরুশিষ্য পরম্পরার এক দুর্দান্ত নজির।

কত্থক নৃত্যশিল্পী টুসি নস্কর-এর ‘শ্রীনৃত্য দীক্ষালয়’-এর প্রথম অনুষ্ঠান শুরু হয় কত্থকের লখনউয়ের কালকা-বিন্দাদিন ঘরানার স্রষ্টা বিরজু মহারাজকে শ্রদ্ধা জানিয়ে। এরপর শ্রদ্ধা জানানো হয় বিরজু মহারাজের শিষ্য পণ্ডিত বিজয়শঙ্করজিকে, তারপর তাঁরই শিষ্য সায়নী চাওড়াকে।

সায়নী চাওড়ার ছাত্রী টুসি নস্কর তাঁর অনুষ্ঠানে যেভাবে গুরু-শিষ্য পরম্পরা তুলে ধরলেন, তা সত্যিই অনবদ্য। অনুষ্ঠান শুরু হয় নারীশক্তির জয়গান ও ভারতমাতার বন্দনা দিয়ে। এরপর অনুষ্ঠিত হয় মাতৃপুজো।

প্রায় একশত নতুন মুখ ৫ নভেম্বর, বুধবার, সুজাতা সদনে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে শিরোধার্য করে কত্থক নৃত্যের নানা দিক ঘুরে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। ‘শ্রীনৃত্য দীক্ষালয়’-এর উদ্দেশ্য, কত্থকের নিরন্তর সাধনা ও সাধ্যমতো প্রচার।

এই অনুষ্ঠানে বিশেষ পরিবেশনায় ছিলেন বিদূষী, ন্যাশনাল স্কলার কত্থক শিল্পী সায়নী চাওড়া। সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠিত কত্থক শিল্পী ঋতুপর্ণা বিশ্বাস ও আহি নস্কর, যাঁদের বিশেষ নিবেদন সমগ্র অনুষ্ঠানের মান বাড়িয়ে তোলে।

শিশু শিল্পী আম্রপালী চাওড়ার কত্থক পরিবেশনের পাশাপাশি ছিল ‘শ্রীনৃত্য দীক্ষালয়’-এর প্রতিষ্ঠাতা টুসি নস্করের নেতৃত্বে বিশেষ পরিবেশনা ‘নমমী রঘুবীর’।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে কচিকাঁচাদের নিয়ে আগাম ‘শিশুদিবস’ উদযাপনের মাধ্যমে। প্রায় শতাধিক শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহার, আর কাটা হয় শিশুদিবসের কেকও।

তিন ঘণ্টার এই লাইভ অনুষ্ঠানে সঙ্গতে ছিলেন সরোদে সুনন্দ মুখোপাধ্যায়, তবলায় দীপায়ন দাস, এবং কণ্ঠে জয়দীপ সিনহা। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন পৌলমী ভদ্র।

শুধুমাত্র একটি নৃত্যানুষ্ঠান নয়, এটি ছিল এক প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র — যেখানে গুরু-শিষ্য পরম্পরা, নারীশক্তি, শাস্ত্রীয় নৃত্যের ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সৃজনশীলতা একত্রিত হয়েছে এক অপূর্ব সেতুবন্ধনে। টুসি নস্কর ও তাঁর ‘শ্রীনৃত্য দীক্ষালয়’ প্রমাণ করলেন যে, কত্থকের ছন্দ, তাল ও সৌন্দর্য আজও সমান জীবন্ত, প্রাসঙ্গিক ও অনুপ্রেরণাদায়ক।