ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক দুর্ধর্ষ বীর — রঘু ডাকাত। ইতিহাস আর প্রায় অমরত্বের মাত্রা পাওয়া নানান শ্রুতি কথার মাঝে এই কিংবদন্তিকে বড়পর্দায় ফিরিয়ে আনছেন পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জি। নামভূমিকায় দেব। রবিবার, ২০ জুলাই মুক্তি পেল এই বহু প্রতীক্ষিত পিরিয়ড অ্যাকশন ড্রামার প্রথম ঝলক অর্থাৎ প্রি-টিজার, যা ইতিমধ্যেই দর্শকের আগ্রহ, উত্তেজনার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছে বেশ কয়েকগুণ।
১ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের রঘু ডাকাত-এর এই প্রি-টিজার ভিডিও তার সমসমায়িক বাকি সব ছবির থেকে একেবারে আলাদা। সমাজমাধ্যমে দেব অনুরাগীদের ইতিমধ্যেই বলা শুরু করেছেন, “এটাকে ‘টিজার’ বলা ভুল, বরং এটি একটি ‘ঘোষণা’ — বাংলা সিনেমায় আবার এক নতুন অ্যাকশন হিরো আসছে, আর তিনি কেবল হিরো নন, তিনি একজন বিদ্রোহী! এক যোদ্ধা। এক প্রতীক।”
টিজার শুরুই হচ্ছে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা এক বাংলার গ্রামের বীভৎস দৃশ্য দিয়ে, যা ইংরেজদের অত্যাচারের অন্যতম নমুনা। প্রাণ বাঁচাতে হুড়োহুড়ি করে ছুটে চলেছে গ্রামবাসীরা। মাটির উপর লুটিয়ে পড়ে রয়েছে লাশ, পাশ দিয়ে বীরদর্পে ঘোড়ায় চেপে ছুটে চলেছে নিষ্ঠুর ইংরেজরা। এরপর এক গভীর, ধীরগতির ক্যামেরা মুভমেন্ট দিয়ে। পেছনের দৃশ্যপটে আগুনের ছটা, ঝড়ের শব্দ, আর সেই ছায়ায় দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ — হাতে ধনুক, চোখে আগুন।
ব্যাকগ্রাউন্ডে শুনতে পাওয়া যায় এক জলদমন্দ্র স্বর: “… কিন্তু ওরা জানত না, আগুন নিভে যায়, ছাই কিন্তু নেভে না। ইতিহাস লেখে শিকারি, বাঘ কিন্তু লেখে না! যদি লিখত, তাহলে ইতিহাসটা কেমন হত বল দেখি?... এবার ইতিহাস লিখবে রঘু!” এই একটি সংলাপ-ই যেন বুঝিয়ে দেয়, রঘু ডাকাতের এই গল্প কেবল ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নয়, বরং এক জাতির বীরত্বের জাগরণ। আর দেবের মুখে সেই ক্রোধ, সেই প্রতিবাদ যেন এক অপ্রতিরোধ্য জোয়ার।
আরও পড়ুন: তিন তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার কথা ভিকি কৌশলের বাবার মুখে! সব ঠিক আছে তো ক্যাটরিনার সংসারে?
‘গোলন্দাজ’–এর পর ফের একবার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কাজ করছেন ধ্রুব ও দেব। কিন্তু এবার গল্প অনেক বেশি অন্ধকার, অনেক বেশি রূঢ়। দেব এখানে আর কোনও রাজকীয় চরিত্রে নেই। তিনি রক্তাক্ত, বিদ্রোহী, রণমূর্তি ধারণ করেছেন। এই প্রজেক্ট ঘিরে টলিউডে বহুদিন ধরেই কানাঘুষো চলছিল। অবশেষে এসভিএফ ও দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্স একযোগে ঘোষণা করল, ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোয় মুক্তি পাবে ‘রঘু ডাকাত’।
ছবি প্রি-টিজারে দর্শকের চোখ টেনেছে যে যে ব্যাপার —
১)ভিজ্যুয়াল টোন- কুয়াশায় মোড়া গ্রামাঞ্চল, জ্বলন্ত ঘর, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন যুদ্ধক্ষেত্র। ছবির সিনেমাটোগ্রাফিতে এক ধরণের জাতীয় স্তরের ছবির মানের পরিণত ঝাঁঝ আছে।
২) দেবের লুক -চোখে প্রতিশোধের আগুন, গালে দাড়ি, মুখে রক্ত লেগে আছে— যাকে বলে একেবারে 'রাফ অ্যান্ড র ’! এই দেবকে আগে কেউ দেখেনি।
৩)অ্যাকশন দৃশ্য - এক মুহূর্তে ধনুক টেনে ধরে শত্রুর দিকে তাক করছেন দেব। পাশে বিস্ফোরণ, উড়ছে ছাই। মনে পড়িয়ে দেয় ‘আরআরআর’ ছবির অ্যাটিটিউড।
৪)আবহসংগীতে বিক্রম ঘোষের মিউজিক ভয় ধরানোর মতো। ঢাক-ঢোল, শঙ্খ, গর্জন—সব একসাথে মিশে তৈরি করছে এক বিদ্রোহের নান্দনিকতা।
পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জি এই ছবি নিয়ে বলেছেন, “...আমরা শুধু একজন ডাকাতের গল্প বলছি না, বলছি এক মানুষের যন্ত্রণা, সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে এক অসাধারণ প্রতিরোধের কাহিনি।” দেব নিজেও জানিয়েছিলেন, 'রঘু' তাঁর ফিল্মি কেরিয়ারের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। তিনি নিজেকে একেবারে নিজেকে বদলে ফেলেছেন এই চরিত্রের জন্য। অভিনেতার মতে, এটা শুধু অ্যাকশন বা লুক নয়, এটা ছিল তাঁর জন্য একটা মানসিক ট্রান্সফরমেশন।
আগস্ট ২০২৫-এ আসতে চলেছে ছবির ট্রেলার। এবং চলতি বছরের দুর্গাপুজোয় গোটা বাংলা প্রস্তুত হচ্ছে এই অ্যাকশন মহাযুদ্ধ দেখার জন্য।রঘু ডাকাতকে নিয়ে বাংলায় বহু কাহিনি প্রচলিত। নদীয়া, বর্ধমান, বীরভূমের লোকজ বিশ্বাস অনুযায়ী রঘু একসময় জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক ডাকাত ছিলেন, যিনি গরিবদের মাঝে সেইসব লুন্ঠিত সম্পদ বিলি করতেন।
সেই লোককথার রঘুকে নিয়েই এবার বড়পর্দায় উঠে আসছে এক ভিন্ন আঙ্গিকের গল্প—যেখানে রঘু এমন একজন ব্রিটিশ আরোপিত তথাকথিত আইন না মানা মানুষ , যাঁর অস্ত্র শুধুই সাহস আর ন্যায়বোধ।‘রঘু ডাকাত’–এর প্রি-টিজার প্রমাণ করল, বাংলা সিনেমা আর শুধুই গান-রোম্যান্সে আটকে নেই। এখানে এখন অ্যাকশন, ইতিহাস, থ্রিল আর হিরোয়িজম একসাথে গাঁথা হচ্ছে।
দেবের এই রূপান্তর, ধ্রুবর লক্ষ্য, ছবির বাজেট — সব মিলিয়ে এটি হতে চলেছে ২০২৫ সালের অন্যতম বড় বাংলা সিনেমা প্রজেক্ট।
