আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোড ব্যবহার করে পান ফ্ল্যাট ২০০ টাকা ছাড়”—এই ধরনের প্রচারমূলক বার্তা খুব শিগগিরই আপনার ফোনে বন্যার মতো নেমে আসতে পারে। কারণ, খাদ্য সরবরাহকারী জায়ান্ট জোম্যাটো বহুদিনের বিরোধ মেটাতে এবার রেস্তোরাঁগুলোর সঙ্গে গ্রাহকের তথ্য ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে মার্কেটিং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ডেটা গোপনীয়তা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
জোম্যাটো বর্তমানে ন্যাশনাল রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (NRAI)-র সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। দেশের পাঁচ লাখেরও বেশি রেস্তোরাঁর প্রতিনিধিত্বকারী এই সংগঠন বহু বছর ধরেই গ্রাহকের ডেটা শেয়ারিংয়ের দাবি জানিয়ে আসছে। একই বিষয়ে জোম্যাটোর প্রতিদ্বন্দ্বী সুইগি-র সঙ্গেও আলোচনা চলছে।
এখন কী বদলাচ্ছে?
এখন পর্যন্ত Zomato বা Swiggy কোনোভাবেই গ্রাহকের ফোন নম্বর বা ব্যক্তিগত তথ্য রেস্তোরাঁর সঙ্গে শেয়ার করত না। গ্রাহকরা অ্যাপের ভেতর থেকে রেস্তোরাঁকে ফোন বা মেসেজ করতে পারলেও, উল্টোটা সম্ভব ছিল না—রেস্তোরাঁগুলো গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারত না। তাদের কাছে কেবল কিছু সার্বিক তথ্য যেত, যেমন—কতজন গ্রাহক কোন আলাকায় অর্ডার করছেন―কিন্তু ব্যক্তি-ভিত্তিক তথ্য নয়।
এবার সেই প্রথায় পরিবর্তন আনতে জোম্যাটো পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে গ্রাহকদের সামনে একটি পপ-আপ দেখাতে শুরু করেছে, যেখানে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে—আপনি কি রেস্তোরাঁকে আপনার ফোন নম্বর শেয়ার করতে সম্মতি দিচ্ছেন? পপ-আপে লেখা—“I allow restaurants to reach out to me for promotional activities.” তবে একবার সম্মতি দেওয়া হলে তা পরে প্রত্যাহার করার কোনো সুযোগ নেই—এটি নিয়েও বিশেষজ্ঞদের আপত্তি তীব্র।
রেস্তোরাঁগুলোর দাবি
রেস্তোরাঁ মালিকদের বক্তব্য, ডেটা মাস্কিংয়ের কারণে তারা গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করতে পারছিলেন না। এর ফলে তারা ভোক্তাদের পছন্দ-অভ্যাস, অর্ডারের ধরণ, এবং বিশেষ অফার দেওয়ার সুযোগ―সবই হাতছাড়া করছিলেন।
রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠন NRAI এর আগেও প্রতিযোগিতা কমিশন (CCI)-এর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল যে জোম্যাটো ও সুইগি ‘অ্যান্টি-কমপেটিটিভ প্র্যাকটিস’-এ লিপ্ত, বিশেষ করে অতিরিক্ত কমিশন এবং গভীর ডিসকাউন্টিংয়ের কারণে রেস্তোরাঁগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খাবার ডেলিভারি অ্যাপগুলোর উত্থান রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। ঘরে বসেই বিরিয়ানি বা পনির টিক্কা পাওয়ার সুবিধা বাজারকে দ্রুত প্রসারিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খাত আগামী বছরগুলোতে আরও ১৮% হারে বাড়তে পারে। তাই রেস্তোরাঁগুলো মনে করে—গ্রাহকের তথ্য পেলে তারা বাজার বুঝে আরও লক্ষ্যভিত্তিক মার্কেটিং করতে পারবে।
উদ্বেগের কারণ কী?
মার্কেটিং বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তকে বলেছেন “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য”। তাদের মন্তব্য—“সরকারের এটা কোনোভাবেই অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। পরেরবার হয়তো তারা আমাদের খাদ্যাভ্যাস পর্যন্ত সবার সঙ্গে শেয়ার করবে!”
ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায়, জোম্যাটোর সিইও আদিত্য মঙ্গলা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন—“গ্রাহকের সম্মতি পেলে কেবল ফোন নম্বরই রেস্তোরাঁর সঙ্গে শেয়ার করা হবে, অন্য কোনো তথ্য নয়।”
ডেটা শেয়ারিংয়ের এই নতুন প্রস্তাব কি গ্রাহকের সুবিধা বাড়াবে, নাকি ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা সমস্যার মুখে ফেলবে—তা সময়ই বলবে। তবে খাদ্যপ্রেমীদের ফোনে প্রচারণার বার্তা বাড়তে পারে, তা নিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
