আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঋণগ্রহীতাদের আর সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে না ক্রেডিট স্কোর আপডেট হওয়ার জন্য। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) এমন একটি বড় পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে, যা কার্যকর হলে ক্রেডিট রিপোর্ট আরও দ্রুত, আরও নির্ভুল এবং ঋণগ্রহীতার সাম্প্রতিক আর্থিক আচরণের সঙ্গে সরাসরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। বর্তমানে মাসে দু’বার ক্রেডিট স্কোর আপডেট হয়। কিন্তু নতুন নিয়মে এই ব্যবধান কমে আসবে মাত্র সাত দিনে।
RBI কী প্রস্তাব করেছে?
RBI-এর খসড়া নির্দেশিকা “Credit Information Reporting (1st Amendment) Directions, 2025” অনুযায়ী, ক্রেডিট ডেটা আপডেটের পুরো ব্যবস্থায় বড় রদবদল আনা হচ্ছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী সমস্ত ক্রেডিট ইনফরমেশন কোম্পানি (CIC) মাসে পাঁচবার ডেটা আপডেট করবে: ৭, ১৪, ২১, ২৮ এবং মাসের শেষ দিনে। ব্যাঙ্ক ও NBFC-গুলি যদিও আগের মতোই মাসে একবার পূর্ণাঙ্গ ক্রেডিট ডেটা পাঠাবে। কিন্তু এই পূর্ণাঙ্গ আপডেটের মধ্যে নতুন ঋণ, ক্রেডিট কার্ড ইস্যু, অ্যাকাউন্ট বন্ধ, EMI পরিশোধের আপডেট, গ্রাহকের তথ্য পরিবর্তন বা ঋণের শ্রেণিবিভাগ পরিবর্তন—এই ধরনের ইনক্রিমেন্টাল পরিবর্তনগুলি আলাদা করে পাঠাতে হবে। এছাড়াও, CIC এবং ঋণদাতা সংস্থা চাইলে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে আরও ঘন ঘন আপডেটের ব্যবস্থাও করতে পারবে।
সাপ্তাহিক আপডেট ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করবে?
প্রতি মাসের তৃতীয় দিনের মধ্যে ব্যাঙ্কগুলি পুরো মাসের সম্পূর্ণ ডেটা CIC-এ পাঠাবে। আর সাপ্তাহিক কাট-অফ তারিখগুলিতে তারা শুধুমাত্র পরিবর্তিত বা নতুন তথ্য পাঠাবে। এর ফলে কেউ ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করলে, ঋণ আগাম শোধ করলে, কোনও ভুল সংশোধন করলে, অথবা সময়মতো পেমেন্ট করে ভালো রেকর্ড তৈরি করলে এই পরিবর্তনগুলি কয়েক দিনের মধ্যেই ক্রেডিট রিপোর্টে প্রতিফলিত হবে।
এছাড়া RBI নতুন একটি জবাবদিহি নীতি যোগ করেছে—যদি কোনও ব্যাঙ্ক নির্দিষ্ট সময়ে ডেটা না পাঠায়, CIC-কে তা RBI-এর DAKSH পোর্টালে হাফ-ইয়ারলি রিভিউয়ের সময় রিপোর্ট করতে হবে।
ঋণগ্রহীতাদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সপ্তাহে একবার আপডেট হওয়া ক্রেডিট রিপোর্ট ঋণগ্রহীতাদের জন্য বহু সুবিধা এনে দেবে। ক্রেডিট স্কোর দ্রুত বাড়বে: বকেয়া পরিশোধ করলে বা কোনও ভুল সংশোধন করলে স্কোর দ্রুত ভালো হবে। ঋণ অনুমোদন দ্রুত হবে: আবেদনকারীদের আর আপডেটের জন্য পনেরো দিন অপেক্ষা করতে হবে না। ক্রেডিট কার্ড পাওয়া সহজ হবে: ব্যাঙ্কগুলো আরও নির্ভুল তথ্য পাবে। সুদহার আরও ন্যায্য হবে: ব্যাংকগুলি ক্রেডিট স্কোর-ভিত্তিক সুদের হার নির্ধারণ করলে ভালো আচরণকারীরা দ্রুত কম সুদ পেতে পারেন। ক্রেডিট রিপেয়ার সময় কমবে: যারা খারাপ রেকর্ড থেকে ফিরে আসছেন, তাদের অপেক্ষার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আসবে?
নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ব্যাঙ্ক ও CIC-দের ওপর দায়িত্ব আরও বাড়বে। ব্যাঙ্কগুলোকে প্রতি কাট-অফ তারিখের দু’দিনের মধ্যে ডেটা পাঠাতে হবে। CIC-কে আরও ঘন ঘন ডেটা প্রসেসিং সিস্টেম বজায় রাখতে হবে, যাতে কোটি কোটি গ্রাহকের রিপোর্ট নির্ভুল থাকে।
২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে প্রস্তাবিত এই ‘সাপ্তাহিক ক্রেডিট আপডেট’ ব্যবস্থা চালু হলে ভারতের ক্রেডিট ইকোসিস্টেমে বড় পরিবর্তন আসবে। ঋণ, ক্রেডিট কার্ড, সুদহার—সবকিছুর অ্যাক্সেস আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও আচরণ-নির্ভর হয়ে উঠবে। আর ক্রেডিট স্কোর হবে কার্যত রিয়েল-টাইম আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রতিফলন।
