আজকাল ওয়েবডেস্ক: নির্জন দ্বীপে একা টিকে থাকার লড়াই। শুধুমাত্র বুনো ফল নয়, জ্যান্ড জীব কখনও পুড়িয়ে, কখনও বা টাটকা অবস্থায় চিবিয়ে খেয়েই দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জেই ইঁদুর ভাজা খেয়ে ৩৫ দিন কাটালেন এক তরুণী। রাতারাতি রোগ ছিপছিপেও হয়ে যান‌। 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২৫ বছর বয়সি তরুণী ঝাউ তিয়েঝু চীনের বাসিন্দা। ৩৫ দিনে তিনি ১৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন। ঝেইঝাং প্রদেশের এক নির্জন আইল্যান্ডে কঠিন এক চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি এবং আরও কয়েকজন। নির্জন এলাকায় বণ্যপ্রাণীদের মধ্যে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়, সেটিই ছিল আসল পরীক্ষা। সেখানেই দিনের পর দিন ইঁদুর ভাজা খেয়েছিলেন তিনি। 

ঝাউ জানিয়েছেন, সেই নির্জন দ্বীপে তিনি পয়লা অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছিলেন। এই কঠিন চ্যালেঞ্জে তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। পুরস্কার হিসেবে ভারতীয় মুদ্রায় ৯৪ হাজার টাকা জিতেছেন। প্রথম ৩০ দিনের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জিতেছিলেন তিনি। এর পরের পাঁচদিনে আরও পুরস্কার জিতে নেন। 

নির্জন এলাকায় টিকে থাকার এই চ্যালেঞ্জ শুরু থেকেই বেজায় কঠিন ছিল বলে জানিয়েছেন ঝাউ। তাঁর কথায়, প্রথম কিছুদিন তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল। রুক্ষ হয়ে গিয়েছিল ত্বক। পা ভর্তি ছিল নানা জাতীয় পোকামাকড়ের কামড়ের দাগে। সানবার্নের জন্যেও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। 

শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও ৩৫ দিনে ১৪ কেজি ওজন ঝরিয়ে রোগা ছিপছিপে হয়ে গেছেন ঝাউ। ৮৫ কেজি থেকে ৭১ কেজি ওজন এখন তাঁর। ওজন কমার পিছনে খাদ্যাভ্যাস বিরাট ভূমিকা পালন করেছে বলেই জানিয়েছেন তিনি। কী কী খেয়েছিলেন নির্জন দ্বীপে? 

ঝাউ জানিয়েছেন, কাঁকড়া, শামুক, কমপক্ষে ৫০টি ইঁদুর খেয়েছিলেন তিনি। দ্বীপ থেকে চলে আসার সময় নিজের সঙ্গে কিছু ইঁদুর ভাজাও নিয়ে এসেছিলেন। যা অত্যন্ত সুস্বাদু খেতে বলেও তিনি জানিয়েছেন। 

কেন তাড়াতাড়ি দ্বীপ ছেড়ে চলে আসেন? 
ঝাউ জানিয়েছেন, গত ৪ নভেম্বর শক্তিশালী টাইফুন আছড়ে পড়েছিল দ্বীপে‌। আতঙ্কেই দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এক মাসের মধ্যে ওজন ঝরাতে পেরে খুশি তিনি। এই চ্যালেঞ্জের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ওই দ্বীপে এখনও দুই যুবক রয়েছেন। কে বিজয়ী হবেন, তা নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। বিজয়ী নগদ ছ'লক্ষ টাকা পুরস্কার পাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই জ্যান্ত ব্যাঙ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন চীনের এক বৃদ্ধা। চীনের এক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে চীনের এক বৃদ্ধার সঙ্গে। ৮২ বছরের এক বৃদ্ধা কোমরের ব্যথা কমাতে আটটি জ্যান্ত ব্যাঙ চিবিয়ে খেয়েছেন সম্প্রতি। তবে লোকমুখে ব্যথা কমানোর টোটকা শুনেই চরম পরিণতি হয়েছে তাঁর। হজম শক্তি খুইয়ে, পেটের যন্ত্রণায় বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। 

জানা গেছে, চীনের ঝেইঝাং প্রদেশের হ্যাংঝাউয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। আটটি ছোট ছোট জ্যান্ত ব্যাঙ চিবিয়ে খাওয়ার পর কোমরের ব্যথা কমার পরিবর্তে পেটের যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করেন ওই বৃদ্ধা। অবশেষে সেই পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ঝ্যাং নামের ওই বৃদ্ধা বর্তমানে হ্যাংঝাউয়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। 

বৃদ্ধার ছেলে চীনের ওই হাসপাতালের চিকিৎসককে জানিয়েছেন, 'আমার মা আটটি জ্যান্ত ব্যাঙ চিবিয়ে খেয়েছেন। সেগুলি খাওয়ার পরেই পেটের যন্ত্রণায় হাঁটাচলা করতে পারছেন না তিনি।' জানা গেছে, বৃদ্ধা হার্নিয়েটেড ডিস্কের সমস্যায় ভুগছিলেন। এর জেরে তাঁর কোমরে তীব্র ব্যথা অনুভূত করতেন। কোমরের যন্ত্রণায় একেবারে ঝুঁকে বসতেন তিনি। সেই ব্যথা সারাতে টোটকা মেনে জ্যান্ত ব্যাঙ চিবিয়ে খান। 

সম্প্রতি স্থানীয়দের কোমরের ব্যথার কথা জানিয়েছিলেন। শেষমেশ এলাকার কয়েকজন বৃদ্ধা তাঁকে পরামর্শ দেন, ছোট ছোট জ্যান্ত ব্যাঙ চিবিয়ে খেলেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। লোকমুখে টোটকা শুনেই পরিবারের সদস্যদের জ্যান্ত ব্যাঙ ধরে আনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন বৃদ্ধা। বাড়িতেই শেষমেশ সেই জ্যান্ত ব্যাঙ চিবিয়ে খান। 

সেগুলি খাওয়ার পর আর হজম করতে পারেননি বৃদ্ধা। ক্রমেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সংক্রমণ ছড়াতেই তাঁর পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। সেই যন্ত্রণায় তিনি পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি করে পরিবারের সদস্যরা বৃদ্ধাকে হ্যাংঝাউয়ের হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

বৃদ্ধার মেডিক্যাল টেস্টের পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সংক্রমণ তাঁর গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। oxyphil cells-এর মাত্রা বেড়ে গেছে। যার জেরে রক্তেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এর জেরেই। যদিও বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। জ্যান্ত ব্যাঙ খেয়ে কোমরের যন্ত্রণা কমানোর কথা এর আগে চিকিৎসকরা শোনেননি। লোকমুখে শোনা টোটকা মানতে গিয়ে যে সর্বনাশ বৃদ্ধা করেছেন, তারপর সাধারণ মানুষদের সতর্ক করেছেন তাঁরা।