আজকাল ওয়েবডেস্ক: কৃষি ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকার মধ্যে যেসব ঋণ কোল্যাটারাল-মুক্ত বলে ধরা হয়, তাতে গ্রাহক ইচ্ছা করলে সোনা বা রুপো বন্ধক দিতে পারেন। সোমবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ছোট ঋণের ক্ষেত্রে সোনা বা রুপো বন্ধক রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। সোমবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘোষণার পর সেই বিভ্রান্তি কাটল।
তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বষ্ট করে জানিয়েছে যে, স্বেচ্ছায়। কোনওরকম চাপ দিয়ে নয়, অর্থাৎ ঋণ দেওয়ার জন্য কোনও ব্যাঙ্ক ঋণগ্রহীতাকে প্রলোভন দেখিয়ে সোনা বা রুপো বন্ধক দিতে বাধ্য করতে পারবে না।
বাজাজ ফিনসার্ভের একটা রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, সোনার ঋণের সুদের হার সাধারণত বার্ষিক ৯.৫০ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এই সুদের হার নির্ভর করে বহু বিষয়ের উপর। যেমন- কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই ঋণ নেওয়া হচ্ছে, ঋণের পরিমাণ কত, লোন-টু-ভ্যালু অনুপাত কী, ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট রেটিং এবং নির্বাচিত স্কিম।
আরবিআই কৃষকদের কোল্যাটারাল-মুক্ত ঋণের সীমা ১.৬ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকা করে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই এই নয়া সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাষাবাদ, দুগ্ধ, হাঁস-মুরগি ও মৎস্যচাষের মতো ক্ষেত্রগুলিতে ক্রমবর্ধমান খরচ সামলাতে কৃষকরা যাতে সহজে ঋণ নিতে পারেন তা নিশ্চিৎ করাই ছিল এর উদ্দেশ্য।
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই নতুন সীমা কার্যকর হয়। পরে চলতি বছর জুন মাসে নিয়মে আরও বেশ কিছু সংস্থার করা হয়। এর পর থেকেই প্রশ্ন উঠছিল, এই সীমার মধ্যে থাকলেও সোনা বা রুপো বন্ধক নেওয়া হলে তা কি কোল্যাটারাল-মুক্ত ঋণের নিয়ম লঙ্ঘন করবে?
সেই প্রশ্নের জবাবে আরবিআই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, “যদি কোনও ঋণগ্রহীতা নিজের ইচ্ছায় সোনা বা রুপো বন্ধক দেন, তবে তাকে কোল্যাটারাল-মুক্ত ঋণের বিধিভঙ্গ বলে ধরা হবে না। তবে, এই বন্ধক দেওয়াটা একান্তই স্বেচ্ছায় হতে হবে। ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে কোনওরকম চাপ বা বাধ্যবাধকতা রাখা চলবে না।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ব্যাখ্যায় এখন কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোগীদের জন্য ঋণ নেওয়ার সুযোগ বাড়ল।
এর আগে কী হয়েছিল?
গোল্ড লোন নিয়ে নানা কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিস্তর বেনিয়মেরও হদিশ পেয়েছে। যেমন, ঋণ সংগ্রহ এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের অনিয়ন্ত্রিত হস্তক্ষেপ, গ্রাহকের অনুপস্থিতিতে সোনার মূল্য নির্ধারণ, ঋণগ্রহীতার বিস্তারিত বিবরণ যাচাইকরণ, ঋণের ব্যবহারের উপর নজরদারির ঘাটতি, ঋণখেলাপির ক্ষেত্রে গহনা নিলামের সময় স্বচ্ছতার অভাব, লোন-টু-লোন অনুপাতে দুর্বল নজরদারি, ঝুঁকি নির্ধারণে ভুল হিসাব।
আরও পড়ুন- আবেদন করলেই মিলবে মাসে ১৫০০০ টাকা, ফ্রেশারদের জন্য কেন্দ্রের নয়া স্কিম, চালু ১ অগাস্ট থেকেই
এই অনিয়মগুলি রুখতে আরবিআই চলতি বছর এপ্রিলে আরবিআই, সব ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসি-কে তাদের সোনার ঋণ সম্পর্কিত নীতি, পদ্ধতি এবং রীতিনীতি সমগ্রভাবে পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে। নিয়মের ঘাটতি কোথায় হচ্ছে, তা দেখে তাড়াতাড়ি উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, সোনার ঋণের পরিমাণ যেহেতু দ্রুত বাড়ছে, তাই এই পোর্টফোলিওতে নজরদারি আরও জোরদার করতে হবে বলে জানিয়েছে আরবিআই। আউটসোর্স করা পরিষেবার উপরও নিয়ন্ত্রণ কঠোর কররার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
নিয়ম কঠোর হলে, গ্রহকদের ঋণ পেতে আরও বেশি যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হলেও পুরো ঋণদান বিষয়টির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকবে বলেই মনে করেছিল দেশের শীর্ষ ব্যাহ্কটি।
