আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে আজ নিজের বাড়ি থাকা মানেই শুধু মাথার ওপর ছাদ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ তৈরির সুযোগও বটে। দেশের কোটি কোটি মানুষ আজ মাসিক ইএমআইকে আর কেবল ঋণ শোধের কিস্তি হিসেবে দেখছেন না, বরং এটিকে ভবিষ্যতের সম্পদ গড়ার ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছেন। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শুরু করে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রেতা—সবাই বাড়ির ঋণকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে একটি নতুন সম্পদশালী প্রজন্ম তৈরি করছে।
ভারতের হাউজিং ফাইন্যান্স মার্কেট বর্তমানে ৩৩ লাখ কোটি টাকার, যা ২০৩০ অর্থবছরে ৭৮ লাখ কোটির গণ্ডি পার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবছর এর বৃদ্ধির হার ১৫–১৬%। শুধু সাশ্রয়ী আবাসন খাতই বছরে ২০–২২% হারে বাড়ছে, যেখানে কোটি কোটি নতুন ক্রেতা প্রবেশ করছে মালিকানার চক্রে। দেশের গড় হোম লোনের পরিমাণ এখন প্রায় ৭৪ লাখ। মুম্বইয়ে গড় ঋণ ৯৯ লাখ, গুরুগ্রামে ৮৮ লাখ। এমনকি ১ কোটির বেশি ঋণ এখন মোট ঋণ বিতরণের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর পরিবেশ বদলে দিচ্ছে হাইড্রোজেন, অশনি সঙ্কেত দিলেন গবেষকরা
গত পাঁচ বছরে দেশের শীর্ষ শহরগুলিতে সম্পত্তির দাম ৪৪–৭৯% বেড়েছে। সামনে ৪–৬% হারে স্থিতিশীল বৃদ্ধি প্রত্যাশিত। রিজার্ভ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সুদহার হ্রাস এই প্রবণতাকে আরও জোরদার করেছে। ফলে ইএমআই এখন কেবল ঋণ নয়, বরং শৃঙ্খলাবদ্ধ সঞ্চয় ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ বৃদ্ধির উপায়। ইএমআই কেবল অর্থের জোগান নয়, বরং বর্তমান আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির মধ্যে এক সেতুবন্ধন। মাসিক কিস্তি আস্তে আস্তে ধার করা টাকাকে একটি স্থায়ী সম্পদে রূপান্তর করে, যা পরিবারকে প্রজন্মান্তরে সম্পদ গঠনে সহায়তা করে।
মধ্যবিত্তরা আজ স্থিতিশীল আয়ের ভিত্তিতে বাড়ি কিনছেন। মেট্রো ও নতুন পরিকাঠামোর কারণে অনেক এলাকার দাম ক্রমাগত বাড়ছে। তাই মাসিক ইএমআই আসলে বিনিয়োগের কিস্তি, কেবল ঋণ পরিশোধ নয়। ব্র্যান্ডেড হোম বা লাক্সারি সেকেন্ড হোমের ক্ষেত্রে ইএমআই কেবল ঋণ নয়, বরং একটি ধাপে ধাপে বিনিয়োগ। কারণ এগুলি অত্যন্ত দ্রুত মূল্যবৃদ্ধি করা সম্পদ।
আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতের ব্র্যান্ডেড রেসিডেন্স ও রিসর্ট ইন্ডাস্ট্রি ১ বিলিয়ন পৌঁছাবে। গত পাঁচ বছরে প্রিমিয়াম শহরে বিলাসবহুল বাড়ির দাম বেড়েছে প্রায় ২৪%, আর কিছু মাইক্রো-মার্কেটে তিন বছরেরও কম সময়ে ১০০% বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের কাছে মাসিক কিস্তি একটি সুসংগঠিত সম্পদ সৃষ্টির পরিকল্পনা হয়ে উঠেছে।
ভারতজুড়ে বাড়ি কেনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। ইএমআই এখন আর দায় নয়—এটি সঞ্চয়, নিরাপত্তা ও সম্পদ সৃষ্টির হাতিয়ার। মধ্যবিত্তরা ইএমআইকে ভবিষ্যতের ভিত্তি হিসেবে দেখছেন, আবার উচ্চবিত্তরা এটিকে ব্যবহার করছেন ক্রমবর্ধমান ‘লাইফস্টাইল অ্যাসেট’ অর্জনে। প্রথম বাড়ি হোক কিংবা বিলাসবহুল দ্বিতীয় বাড়ি—শৃঙ্খলাবদ্ধ মাসিক কিস্তি কোটি কোটি ভারতীয়কে ধার করা অর্থকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করছে। প্রমাণ করছে, নিয়মিত পরিশোধই হতে পারে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আসল ভিত।
