আজকাল ওয়েবডেস্ক: বুধবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সভাপতিত্বে ৫৬তম গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) কাউন্সিলের বৈঠক বসে। বৈঠকে এমন এক বড় কর সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয় যা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দাম কমাতে পারে, তবে বিলাসবহুল পণ্যের উপর শুল্ক বাড়াতে পারে।
কেন্দ্রের প্রস্তাবকে ‘নেক্সট-জেন’ জিএসটি সংস্কার বলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বর্তমানে বিদ্যমান চার-স্তরের কর কাঠামোকে কমিয়ে মাত্র দুটি স্ল্যাবে আনা হবে ৫% এবং ১৮%। অর্থাৎ, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে জিএসটি চালুর সময় রাখা ১২% ও ২৮% হারের স্ল্যাব বাদ দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনার আওতায়, বর্তমানে ১২% হারে থাকা প্রায় সব পণ্য এবং ২৮% হারে থাকা বেশিরভাগ পণ্যকে নিম্ন হারে আনা হবে। যার ফলে ভোক্তা পণ্যের দামে বড় ধরনের হ্রাস ঘটতে পারে।
আরও পডুন: বাজারের রক্তক্ষরণ চলছেই, সকলের নজরেই জিএসটি বৈঠক
প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১২% হারে থাকা ৯৯% এরও বেশি পণ্য যেমন ঘি, বাদাম, প্যাকেজড পানীয় জল (২০ লিটারের ক্যান), নন-অ্যারেটেড পানীয়, নেমকিন, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ৫% ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। পেন্সিল, সাইকেল, ছাতা ও হেয়ারপিনের মতো সাধারণ গৃহস্থালি জিনিসপত্রেও কর কমে ৫% হতে পারে। ইলেকট্রনিক সামগ্রীও সস্তা হতে পারে। বর্তমানে ২৮% হারে কর বসা টেলিভিশনের কিছু মডেল, ওয়াশিং মেশিন ও ফ্রিজকে নতুন প্রস্তাবে ১৮% স্ল্যাবে আনা হবে।
বিলাসবহুল পণ্যে কি ৪০% কর?
যেখানে বেশিরভাগ পণ্যের কর কমানো হচ্ছে সেখানে সরকার বিলাসবহুল ও ‘সিন’ (ক্ষতিকর) পণ্যের জন্য আলাদা ৪০% স্ল্যাব চালু করার পরিকল্পনা করছে। উচ্চমানের গাড়ি, এসইউভি ও অন্যান্য প্রিমিয়াম গাড়ি, যেগুলিতে বর্তমানে ২৮% জিএসটি ও ক্ষতিপূরণ সেস বসে, সেগুলিকে এই নতুন স্ল্যাবে আনা হতে পারে। তামাকজাত দ্রব্য, পান মসলা ও সিগারেটও এই স্ল্যাবে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে, পাশাপাশি এই খাতে অতিরিক্ত কর আরোপের কথাও ভাবা হচ্ছে।
ইলেকট্রিক ভেহিকেলস (ইভি) নিয়েও আলোচনা চলছে। ইভির উপর ৫% জিএসটি রাখার মাধ্যমে প্রচলন বাড়াতে কেন্দ্র আগ্রহী। তবে প্রিমিয়াম ইভির উপর বাড়তি কর বসানো উচিত কি না, সে বিষয়েও আলোচনা চলছে, যাতে সস্তা ও বিলাসবহুল মডেলের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়।

তবে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু, পঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, হিমাচল প্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের মতো বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি এই ব্যাপক কর হ্রাস নিয়ে আপত্তি তুলেছে। তাদের মতে, এতে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি হবে, এবং তাই তারা সুস্পষ্ট ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে। বৈঠকের আগে এই রাজ্যগুলি নিজেদের কৌশল ঠিক করতে বৈঠকে বসতে পারে।
২০১৭ সালে জিএসটি চালুর সময় কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে পাঁচ বছরের জন্য রাজস্ব ক্ষতি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যা বিলাসবহুল ও ডিমেরিট পণ্যের উপর ১% থেকে ২৯০% পর্যন্ত সেস থেকে তোলা হত। সেই ব্যবস্থা জুন ২০২২-এ শেষ হয়েছে। এখন রাজ্যগুলির দাবি, ৪০% স্ল্যাবের উপরে যে কোনও অতিরিক্ত কর আরোপ হলে তা সরাসরি রাজ্যগুলির রাজস্ব তহবিলে দেওয়া হোক।
এখন কেন এই পদক্ষেপ?
এই বড় সংস্কার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের পর এসেছে, যেখানে তিনি ভোগ বাড়ানো ও জিএসটি ব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য বড় কর সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। কেন্দ্রের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা মন্ত্রীদের গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই নীতিগতভাবে এটিকে সমর্থন করেছে, ফলে ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বরের কাউন্সিল বৈঠকে এটি আনুষ্ঠানিক আলোচনার পথে রয়েছে।
যদি এটি অনুমোদন পায়, তবে ভারতের কর কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আসবে। একদিকে সস্তা হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও ইলেকট্রনিক পণ্য, অন্যদিকে বিলাসবহুল গাড়ি ও ক্ষতিকর পণ্যে বাড়বে কর। এর ফলে এটি জিএসটি চালুর পর থেকে অন্যতম বড় সংস্কার হিসেবে চিহ্নিত হবে।

