আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফুলের কাজে ভিন রাজ্যে গিয়ে ফের নিভে গেল দুই তরতাজা প্রাণ। কয়েক দিন আগেই পিংলার তিন যুবকের মৃত্যুর শোক কাটেনি। তার মধ্যেই কর্ণাটকের উডুপি জেলার কাপু থানা এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের দুই যুবক। মৃতেরা হলেন, লক্ষীকান্ত দাস (৩৪) ও সমরেশ গুড়াইত (৩১)। দু’জনেই পরিবার পরিজনকে ভরসা দিয়ে, রোজগারের স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে ফুলের কাজে কর্ণাটকে গিয়েছিলেন ডেবরার কাঁকড়া হরপ্রসাদ ও টাঙ্গাইশী এলাকার একদল যুবক। রবিবার রাতের কাজ শেষে ঠিক মতোই গাড়িতে ওঠেন সকলে। কিন্তু উডুপির কাপু থানা এলাকার কাছে নিয়ন্ত্রণ হারায় একটি পিক-আপ ভ্যান। মুহূর্তে উলটে যায় গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পাঁচ জনের। পরে জানা যায়, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ডেবরার ওই দুই যুবকও।

মঙ্গলবার বিকেলে মৃতদেহ দু’টি গ্রামের বাড়িতে পৌঁছনোর কথা। এলাকায় ইতিমধ্যেই জমেছে মানুষের ভিড়। অপেক্ষা শুধু দু’টি কফিনের। গ্রামবাসীদের কথায়, “রোজগারের জন্য এতদূর যেতে হয়। কিন্তু নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। একের পর এক মৃত্যুতে ভয়ে কাঁটা পরিবারগুলো।”

পিংলারের একই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই ডেবরার এই করুণ পরিণতি আবারও উঠে এল ভিন রাজ্যে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন। স্থানীয়দের দাবি, বারবার দুর্ঘটনার শিকার হওয়া এই শ্রমিকদের জন্য সরকারের তরফে কঠোর নজরদারি ও যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। দু’টি গ্রাম এখন শোকে স্তব্ধ। কাজের খোঁজে যাওয়া, আর ঘরে ফিরে আসা তার মাঝে কতটা অনিশ্চয়তা লুকিয়ে থাকে, তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কর্ণাটকের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। 

গত আগস্ট মাসে পরিবারের আর্থিক হাল ফেরানোর জন্য দিল্লিতে ফেরিওয়ালার কাজ করতে গিয়ে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদের নওদা থানা এলাকার একই পরিবারের চার সদস্যের। নওদা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তিদের নাম রবিউল মণ্ডল (২২), রেক্সোনা খাতুন (৭), রুবিনা বিবি (২০) এবং হাসিনা খাতুন (৭)। তাঁদের সকলের বাড়ি নওদা থানার অন্তর্গত গঙ্গাধারী-জোড়তলা গ্রামে। 

গত তিন মাস আগে রবিউল পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য, স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক এবং ফেরিওয়ালার কাজ করতে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, রবিউল মণ্ডল এবং তাঁর এক ভাই মাস তিনেক আগে ভাল উপার্জনের আশায় নিজেদের স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে দক্ষিণ -পূর্ব দিল্লির জাইতপুর নামে একটি এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বস্তিতে থাকতে শুরু করেন। 

শনিবার সকালে ওই পরিবারের কয়েকজন সদস্য যখন নিজেদের প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে ঘুমিয়ে ছিলেন সেই সময় বস্তির পাশের একটি বড় দেওয়াল হুড়মুড়িয়ে তাঁদের সকলের উপর ভেঙে পড়ে। ঘুমের মধ্যেই ইট এবং কংক্রিট চাপা পড়ে মৃত্যু হয় আট জনের। তাঁদের মধ্যে চারজন মুর্শিদাবাদে নওদার বাসিন্দা।  মুর্শিদাবাদের ওই পরিবারটির অপর এক সদস্য এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে দিল্লির সফদারজঙ্গ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। 

মৃতের পরিবারের এক সদস্য মনিরুল ইসলাম জানান, 'সম্প্রতি রবিউল গ্রামে নিজের একটি বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে বাড়ির ছাদ  ঢালাই করতে পারছিলেন না। এই কারণে পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য, স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে তিনি দিল্লিতে চলে গিয়েছিলেন ভাল রোজগারের আশায়।'
 
ওই ব্যক্তি বলেন, 'এক কন্ট্রাক্টর-এর অধীনে তাঁরা দিল্লিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। শনিবার দুপুর একটা নাগাদ আমরা খবর পাই দিল্লিতে দেওয়াল চাপা পড়ে আট জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আমাদের পরিবারের চারজন সদস্য রয়েছেন।' 

দিল মহম্মদ মণ্ডল নামে মৃতের অপর এক আত্মীয় জানান, 'দিল্লির যে এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের বাড়ির লোকেরা সেখানে একটি বস্তিতে একটি বড় পাঁচিলের সঙ্গে ত্রিপল খাটিয়ে কোনওরকমে গত কয়েক মাস ধরে থাকতেন।' তিনি আরও জানান, 'আজ সকালে আমাদের বাড়ির এক মহিলা সদস্যা সেখানে ঝুপড়ির বাইরে বসে রান্না করছিলেন। সেই সময় হুড়মুড়িয়ে ওই পাঁচিলটি সকলের উপর ভেঙে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা শুনেছি প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে পাঁচিলটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সেই কারণে ভেঙে পড়েছে।'