মিল্টন সেন, হুগলি: কোনও বিজ্ঞপ্তি নেই! রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের সীমানায় আটকে দেওয়া হচ্ছে আলুবোঝাই গাড়ি। তাই আগামী মঙ্গলবার থেকে সারা রাজ্যে আলু সরহাবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও রাজ্য হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। 

তাঁদের অভিযোগ, ভিন রাজ্যে আলু রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনও প্রকারের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই রাজ্যের সীমানায় আটকে দেওয়া হচ্ছে আলুবোঝাই গাড়ি। এই নিয়ে গত বৃহস্পতিবার এবং শনিবার তারকেশ্বরের আলু ব্যবসায়ী সমিতি ভবনে দু'দফায় বৈঠক করে রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও রাজ্য হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 

বৈঠক শেষে এদিন সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের সমস্ত হিমঘর থেকে আলু সরহাবরাহ বন্ধ রাখা হবে। উল্লেখ্য আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করার পরই গত ২৩ নভেম্বর কলকাতার বাজারে আলুর দামে রাশ টানতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। হুগলির আলু ব্যবসায়ীদের নিয়ে হরিপালে বৈঠক করেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। বৈঠকে ঠিক হয় ২৬ টাকা কেজি দরে হিমঘর থেকে আলু বিক্রি করবেন ব্যবসায়ীরা। 

অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করলেও, ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। রাজ্যের সীমানায় আলুর গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। অথচ কোনও নির্দেশিকা ছাড়াই। এছাড়াও বেআইনিভাবে ফাইনও করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ আলু ব্যবসায়ীদের। 

চলতি সপ্তাহে দু'বার বৈঠক করে রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও রাজ্য হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এদিন বৈঠক শেষে রাজ্যের প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অবিলম্বে ভিন রাজ্যে আলু রপ্তানির  ক্ষেত্রে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে আগামী মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের সমস্ত হিমঘর থেকে আলু সরবরাহ বন্ধ থাকবে। ফলে স্বাভাবিক কারণেই বাজারে আলুর যোগান কমবে। ফলে আবারও নতুন করে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা প্রকট হবে।

আলু ব্যবসায়ীরা কর্মবিরতির হুঁশিয়ার দেওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন খুচরো ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মধ্যবিত্তরা। আবার কি তাহলে হেঁশেলে আলুর টান পড়বে? প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সভাপতি উত্তম পাল বলেন, শনিবার হুগলির তারকেশ্বরে মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তারপরেও বর্ডার না খুললে আগামী মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাঁরা কর্মবিরতিতে যাবেন। 

উল্লেখ্য গত আগস্ট মাসে আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভিন রাজ্যে আলু রপ্তানি বন্ধ করার নির্দেশিকা জারি করেন। বাংলা-বিহার ও বাংলা-ঝাড়খণ্ড বর্ডার সিল করে দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। প্রতিবাদে ধর্মঘটে সামিল হন আলু ব্যবসায়ীরা।তবে শেষমেশ নবান্নে বৈঠকে জট কাটে।

বর্তমানে রাজ্যের হিমঘরগুলিতে আলু মজুত রয়েছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। নভেম্বর মাস পর্যন্ত হিমঘরে আলু মজুত রাখা যাবে। তারপর হিমঘর বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। সেই ক্ষেত্রে এবার সময় বাড়ানো হল ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। উত্তম পাল বলেন, প্রতি কুইন্টালে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা বেশি ভাড়া দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। এছাড়াও শ্রমিকদের খরচ সহ সব নিয়ে ২০ টাকা করে বেশি গুণতে হবে। বৃষ্টির জন্য এবছর আলু বসানোর সময় কম করে এক মাস পিছিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে মজুত আলু দিয়ে এক মাস বেশি টানতে হবে।