মিল্টন সেন, হুগলি: গত ২১ দিন ধরে নিখোঁজ 'রিও'। তার খোঁজে কাতর আবেদন জানিয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে সর্বত্র। পাশাপাশি চলছে মাইক প্রচার। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে প্রচার। ঘোষণা করা হয়েছে সন্ধান দিলেই মিলবে নগদ দশ হাজার টাকা। তবে রিও কোনও মানুষ নয়। সে একটা আফ্রিকান গ্রে প্যারোট বা ধূসর রঙের তোতা পাখি। 

হুগলির পান্ডুয়া স্টেশন রোড খারাজিপাড়ার বাসিন্দা মলয় মজুমদারের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় আফ্রিকান গ্রে প্যারট। বড় আদরের, ওই পাখিকে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করত মজুমদার দম্পতি। ছোট্ট থেকে মানুষ করেছে। আদর করে নাম দিয়েছিল রিও। 

আরও পড়ুন: 'টিকিট দেখি', বলতেই মহিলা টিটিই-কে গালিগালাজ, গলায় ফাঁস দিয়ে খুনের চেষ্টাও! ক্যানিং স্টেশনে শিউরে ওঠা কাণ্ড

তোতা হারিয়ে যাওয়ায় নাওয়া খাওয়া ভুলে তার খোঁজ চালাচ্ছেন মলয়। সকালে টোটোয় মাইক বেঁধে বেরিয়ে পড়ছেন প্রচারে। নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণার সঙ্গে চলছে পুরষ্কারের ঘোষণাও। তাঁর বক্তব্য, 'কেউ যদি রিওর খোঁজ দিতে পারেন, দয়া করে জানান'। মাইকে করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানানো হচ্ছে কাতর অনুরোধ। 

এই প্রসঙ্গে বুধবার মলয় মজুমদার বলেন, বাড়িতে সবসময় ছাড়া থাকত রিও। গত ৯ জুলাই খাওয়ার পর তাঁর কাঁধে বসেছিল রিও। তাঁর বাড়িতে অনেকগুলো কুকুরও আছে। একটা কুকুর হঠাৎ লাফিয়ে তাঁর দিকে আসতেই ভয় পেয়ে উড়ে যায় রিও। গিয়ে বাড়ির উল্টোদিকে থাকা নারকেল গাছে বসে। সেখান থেকে আর ফিরে আসেনি। 

কোথায় যে চলে গেলে বুঝতে পারছেন না মলয়। পান্ডুয়া সংলগ্ন খন্যান, বৈঁচী, সিমলাগড়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করেছেন। এর মধ্যে একদিন তিনি খোঁজ পান কাকদ্বীপে একজন একটি ধূসর তোতা পেয়েছেন। সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই তোতা তাঁর রিও নয়। গত এক সপ্তাহ ধরে কোন কাজ তিনি করতে পারছেন না। 

মলয় আরও বলেছেন, একদম নিজের সন্তানের মতোই রিও। তাই তাকে এমনভাবে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাঁর ধারণা রিও, ও তাঁকে ঠিক একইভাবে খুঁজছে। কারণ একটা মুহূর্ত রিও তাঁকে ছাড়া থাকত না। পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ৯ মাস আগে রিওকে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর হাতেই ও বড় হয়েছে। মলয়ের স্ত্রী প্রভাতি মজুমদার বলেন, 'রিও পরিবারের একজন সদস্য ছিল। হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সবার মন খুবই খারাপ। কিছুই ভাল লাগছে না।' 

প্রসঙ্গত, হুগলিতে পোষ্যের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় এমনটা আগেও ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৬ জানুয়ারি। 
চুঁচুড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিড়ালের ছবি দিয়ে সন্ধান চাই পোস্টার দিয়েছিলেন চুঁচুড়া জোরাঘাটে গঙ্গাপারের একটি আবাসনের বাসিন্দা ঋতব্রত সেনগুপ্ত। তাঁর স্ত্রী রূপা সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, খুবই বাধ্য ছিল টমু। কয়েকদিন আগে টমুর শরীর খারাপ হয়েছিল। ডাক্তার দেখানো হয়েছে। ওর ইসিজি, রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। সব নিয়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তাছাড়া ওকে নিয়মিত ডাক্তার দেখানো হত। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। তবে যেকোনও খাবার খেত না। এক বছর আগে কুড়িয়ে পাওয়া বিড়াল ছানাকে খুব আদর করতেন জোড়া ঘাট অঞ্চলের বাসিন্দা সেনগুপ্ত দম্পতি। নাম রেখেছিল টমু। পরবর্তী সময়ে ওই বেড়াল ছানাকে সন্তানের মতো যত্ন করেছেন। আদর যত্নে লালিত-পালিত টমু এখন আয়তনে বেশ বড় হয়ে উঠেছে। আসলে হুলো বেড়াল হলেও, তাকে দেখতে ছিল ছোটো খাটো বাঘের মতো। প্যাকেটের খাবার ওর খুব পছন্দের। পোষ্যর সন্ধান পেতে শহর জুড়ে পড়ল নিখোঁজ পোস্টার। তাতে টমুর ছবি দিয়ে সন্ধানের কাতর আবেদন। সঙ্গে সমাজমাধ্যমেও ছবি সহকারে কাতর আবেদন করেছে দম্পতি। 
ছবি: পার্থ রাহা