আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর শহরে ভাগীরথী নদীর বুকে জেগে ওঠা 'নেতাজি সুভাষ দ্বীপ' এবছরের শীতে প্রচুর মানুষের বনভোজন করার জন্য প্রিয় ঠিকানা হয়ে উঠেছে। শীতের কুয়াশা ঢাকা সকালে এখানে পা রাখলেই মনে হয় প্রকৃতি যেন নিজের হাতে সাজিয়ে রেখেছে এক টুকরো স্বর্গ। জঙ্গিপুর পুরসভা তৃণমূল কংগ্রেস হাতে নেওয়ার পর প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া এই দ্বীপটিকে বিশেষভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যার ফলে একটু শীত পড়তেই প্রচুর মানুষ নিজেদের প্রিয়জনদের নিয়ে এই দ্বীপে উপস্থিত হচ্ছেন বনভোজন করার জন্য।
দূর দুরান্ত থেকে এই দ্বীপে বনভোজন করতে এসে কোনও মানুষ যাতে অসুবিধার মধ্যে না পড়েন তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে পুরসভার তরফ থেকেও। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সন্তোষ চৌধুরী জানিয়েছেন, পর্যটকদের সমস্ত সুযোগ সুবিধার দিকে নজর রাখতে ইতিমধ্যেই সেখানে বেশ কিছু কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে কীভাবে যাবেন এই দ্বীপে? বহরমপুর শহর থেকে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রঘুনাথগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে সেখান থেকে কোনও টোটো বা ভ্যানে করে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সদরঘাটের কাছে অবস্থিত এই দ্বীপে। চারদিক জল বেষ্টিত এই দ্বীপে পৌঁছতে গেলে প্রথমেই আপনাকে পায়ে হেঁটে পার হতে হবে সুন্দর একটি ঝুলন্ত সেতু।
শহরের কোলাহল থেকে বেশ কিছুটা দূরে সবুজ ঘাসের গালিচা পাতা এই দ্বীপে নামলেই আপনার মন খুশিতে ভরে উঠবে। সঙ্গে পরিবারের লোক থাকলে তাঁদের সকলকে নিয়ে আনন্দ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে এই দ্বীপে।
জঙ্গিপুর পুরসভার এক আধিকারিক জানান, এই দ্বীপে সারা বছরই টিকিট কেটে ভেতরে ঢোকা যায়। তবে প্রতি বছরের শীতকাল পড়লেই প্রচুর মানুষ এই দ্বীপে পরিবারের লোকজন এবং বন্ধুদের নিয়ে আসেন বনভোজন করার জন্য। সাধারণ পর্যটকদের ঝুলন্ত সেতু পার করে পায়ে হেঁটে এই দ্বীপে প্রবেশ করতে হলেও বনভোজন করার জন্য রান্নার এবং গান বাজনার জিনিসপত্র টোটো বা ভ্যানে চাপিয়ে অন্য একটি প্রবেশ পথ দিয়ে ভেতরে নিয়ে আসা যায়।

পুরসভার ওই আধিকারিক জানান, কেবলমাত্র মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয় সুভাষ দ্বীপের সৌন্দর্যের খবর ছড়িয়ে পড়তে বর্তমানে কলকাতা, বর্ধমান এবং ঝাড়খন্ড থেকেও প্রচুর লোক শীতের সময় এখানে বনভোজন করতে আসেন। সকলের সুবিধার জন্য পুরসভার তরফ থেকে ইতিমধ্যেই সেখানে দু'টো বড় 'ডাইনিং হল' তৈরি করা হয়েছে। আগে থেকে বুকিং করে রাখলে সেখানে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এর পাশাপাশি পুরসভার তরফ থেকে দ্বীপ জুড়ে প্রচুর 'কটেজ' তৈরি করা হয়েছে । সেই কটেজগুলো ভাড়া নিয়ে তার আশেপাশের রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
দ্বীপে আগত সকলের মনোরঞ্জনের জন্য পুরসভার তরফ থেকে টয়ট্রেন এবং শিশুদের জন্য পার্ক তৈরি করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের প্রচুর পাখি নিয়ে একটি ছোট পাখিরালয় তৈরি করা হয়েছে ওই দ্বীপে। এখানে এলে কৃত্রিমভাবে নির্মিত একটি ঝর্ণার সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা এখন পর্যটকদের জন্য 'মাস্ট' ।
পুরসভা সূত্রের খবর, বড়দিন, ইংরেজি নতুন বছর-বর্ষ শেষের দিনগুলোর মতো বিশেষ দিনে প্রায় ২৫০-৩০০টি বনভোজনের দল এখানে প্রতি বছর আসে। এই বছরও প্রচুর লোক বনভোজন করতে আসবেন ধরে নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শেষ করে রেখেছে জঙ্গিপুর পুরসভা।
বনভোজন করতে আসা দলগুলো ইচ্ছা করলেই সূর্যাস্তের সময় সদরঘাট থেকে নৌকা করে ভাগীরথী বক্ষে ভ্রমনে যেতে পারেন। নৌকায় বসে দেখতে পাবেন ঘরে ফিরে যাওয়া বালিহাঁস , পানকৌড়ির মতো পাখিদের। জঙ্গিপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের সন্তোষ চৌধুরী বলেন, "নেতাজী সুভাষ দ্বীপে এবার শীতে সকলকে স্বাগত জানানোর জন্য আমরা ইতিমধ্যেই তৈরি। গোটা দ্বীপটিকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। নোংরা আবর্জনা পরিষ্কার করে সবুজের পরিমাণ গোটা দ্বীপে আরও বাড়ানো হয়েছে।"
সন্তোষবাবু দাবি করেন, "পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে বড় 'দ্বীপ-পার্ক' জঙ্গিপুরের নেতাজী সুভাষ দ্বীপ। কলকাতা শহর থেকে কিছুটা দূরে হওয়ার কারণে অনেকেই এই দ্বীপের খবর জানেন না।"
শীতের সময় সুভাষ দ্বীপে ঘুরতে এসে যাতে কেউ কোনও অসুবিধার মধ্যে না পড়েন তার জন্য ইতিমধ্যেই পুরসভার তরফ থেকে ওই দ্বীপে বেশ কিছু নিরাপত্তা রক্ষী-সহ অন্যান্য কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা দ্বীপে আগত পর্যটক এবং বনভোজনের দলগুলোকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করবেন।
