আজকাল ওয়েবডেস্ক: চীনের মহাকাশ সংস্থা ঘোষণা করেছে যে তারা দুইজন পাকিস্তানি নভোচারীকে প্রশিক্ষণ দেবে, যার মধ্যে একজন পরবর্তীতে চীনা ক্রুর সঙ্গে স্বল্প-মেয়াদী মিশনে অংশ নেবে তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনে। এই পাকিস্তানি নভোচারী হবেন চীনা মহাকাশ স্টেশনের প্রথম বিদেশি অতিথি। মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রধান সহযোগী দেশ হল চীন।


দশক-প্রাচীন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, কানাডা ও ইউরোপ একত্রে কাজ করে, সেখানে চীন নিজস্ব তিয়ানগং নামের পূর্ণাঙ্গ মহাকাশ স্টেশন পরিচালনা করছে ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে। পৃথিবীর প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রদক্ষিণরত এই স্টেশনেও নিয়মিত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে এবং সেখানে সর্বদা তিনজন চীনা নভোচারীর একটি স্থায়ী দল অবস্থান করে।
CMSA মুখপাত্র ঝ্যাং জিংবো জানিয়েছেন, “দুইজন নির্বাচিত পাকিস্তানি নভোচারী চীনা নভোচারীদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। তাদের মধ্যে একজনকে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী তিয়ানগং স্টেশনে পে-লোড বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বল্প-মেয়াদী মিশনে পাঠানো হবে।” তিনি আরও জানান, মিশনের সময় সেই নভোচারী রুটিন কাজের পাশাপাশি পাকিস্তানের জন্য বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও পরিচালনা করবেন।


চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত এক সহযোগিতা চুক্তির পর থেকেই পাকিস্তানি নভোচারী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চীনের নভোচারী নির্বাচনের তিনটি ধাপ রয়েছে— প্রাথমিক নির্বাচন, দ্বিতীয় নির্বাচন ও চূড়ান্ত নির্বাচন। পাকিস্তানি নভোচারীর ক্ষেত্রে প্রথম ধাপটি পাকিস্তানেই সম্পন্ন হচ্ছে, আর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ধাপ সম্পন্ন হবে চীনে। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, যেখানে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, পাঠ্যসামগ্রী, সরঞ্জাম ও জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: দুটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে তিনটি পৃথিবী, সামনে এল অবাক করা আবিষ্কার


পাকিস্তানের নিজস্ব মহাকাশ সংস্থা SUPARCO থাকলেও তাদের স্বাধীন মহাকাশ কার্যক্রম সীমিত। তারা এখনো মহাকাশে পাঠানোর মতো নিজস্ব রকেট তৈরি করতে পারেনি। পাকিস্তানের বেশিরভাগ স্যাটেলাইটই চীনের সহায়তায় নির্মিত এবং চীনের রকেটেই উৎক্ষেপণ করা হয় চীনের ভূমি থেকে।


CMSA মুখপাত্র ঝ্যাং জিংবো বলেন, “আমরা বিদেশি নভোচারীদের চীনা মহাকাশ স্টেশনের মিশনে অংশগ্রহণের জন্য বেছে নিচ্ছি, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিময়কে উৎসাহিত করবে। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সহকর্মীদের স্বাগত জানাই চীনা মহাকাশ অভিযানে অংশ নিতে।”


অন্যদিকে, ২০২৫ সালের জুনে ভারতীয় বিমানবাহিনীর টেস্ট পাইলট গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আমেরিকার Axiom-4 মিশনের অংশ হিসেবে SpaceX-এর Falcon 9 রকেট ও Crew Dragon যানযোগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছান। তিনিই রাকেশ শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয়, যিনি মহাকাশে গিয়েছেন প্রায় ৪১ বছর পর।


রাকেশ শর্মার মিশনটি ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির প্রারম্ভিক পর্যায়ে সম্পন্ন হলেও শুভাংশু শুক্লার এই ফ্লাইটটি ভারতের গগনযান প্রকল্পের জন্য প্রস্তুতিমূলক মিশন হিসেবে দেখা হচ্ছে। গগনযানের লক্ষ্য হলো ভারতীয় নভোচারীদের নিজস্ব রকেট ও ক্যাপসুলে করে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো, কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পাদন করা এবং নিরাপদে ফিরে আসা। দশকের শেষ নাগাদ ভারত এই মিশন সফল করতে চায় এবং ভবিষ্যতে নিজেদের স্বতন্ত্র মহাকাশ স্টেশন গড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।