আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশের তরুণ রাজনৈতিক নেতা শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার পর দুই মূল সন্দেহভাজন মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছে। এমনই জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। হাদি হত্যা মামলায় পুলিশ ফয়সাল করিম মাসুদ এবং আলমগীর শেখকে মূল অভিযুক্ত বলে শনাক্ত করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি, মাসুদ ও আলমগীর স্থানীয় সহযোগীদের সহায়তায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদি্ক বৈঠকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেছেন, তদন্তকারীরা সন্দেহভাজনদের পালানোর পথ খুঁজে বের করেছেন। পুলিশের তথ্য এবং বাংলাদেশি সংবাদ পত্র 'দ্য ডেইলি স্টার'-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সীমান্ত পার হওয়ার পর পুর্তি নামের এক ব্যক্তি মাসুদ ও আলমগীরের সঙ্গে দেখা করেন। পরে সামি নামের এক ট্যাক্সি চালক তাঁদের ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা শহরে নিয়ে যায়।
নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ অনানুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছে যে পুর্তি এবং সামি উভয়কেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আটক করেছে। তবে, বিষয়টির আনুষ্ঠানিক নিশ্চিৎকরণের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পলাতকদের ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং হাদি হত্যার দুই মূল সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার ও প্রত্যর্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় মাধ্যমেই যোগাযোগ চলছে।
ওসমান হাদি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ভারত ও আওয়ামী লীগের একজন কট্টর সমালোচক ছিলেন। তিনি গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থান নামে পরিচিত ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। এই আন্দোলনই শেখ হাসিনা সরকারের পতন তরান্বিত করেছিল।
অভ্যুত্থানের পর হাদি ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় মুখোশধারী বন্দুকধারীরা হাদিকে মাথায় গুলি করে। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছয় দিন পর হাদি মারা যান।
ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অংশে ব্যাপক হিংসার জন্ম দেয়। জনতা রাজধানী ঢাকার বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র 'প্রথম আলো' ও 'দ্য ডেইলি স্টার'-এর কার্যালয় এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ছায়ানট' ও 'উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী'র কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই অস্থিরতা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। ধরামীয় অবমাননার অভিযোগে ময়মনসিংহে এক হিন্দু কারখানার শ্রমিককে জনতা পিটিয়ে হত্যা করে। এই হত্যা হাদির মৃত্যুর পর বাংলাদেশে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে, প্রশ্ন ওঠে ইউনূস সরকারের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার মনোভাব নিয়েও।
