আজকাল ওয়েবডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তরটি ধসে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা অতীতে সতর্ক করেছেন যে, অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে গেলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়ে যাবে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, উষ্ণ সমুদ্রের জলের কারণে ৯,০০০ বছর আগে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তরটি সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল।
পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা বরফ স্তরটি হল পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত স্থলভাগের বরফের একটি বিশাল অংশ। গবেষকরা জাপানের শোওয়া স্টেশনের কাছে সমুদ্রের তলদেশের পলিতে এমন প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন যা প্রমাণ করে যে উষ্ণ গভীর সমুদ্র স্রোতের কারণেই এই বরফ গলে গিয়েছিল। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পোলার রিসার্চ (NiPR)-এর অধ্যাপক ইউসুকে সুগানুমার নেতৃত্বে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল।
ভবিষ্যতে সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন বোঝার জন্য সুগানুমা একটি গবেষণা শুরু করেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, অতীতে উষ্ণ জলবায়ুর কারণে অ্যান্টার্কটিক বরফের স্তরে কী প্রভাব পড়েছিল। তাঁর দল লুটজো-হোম উপসাগরের সমুদ্রতল থেকে পলির নমুনা সংগ্রহ করে। পলির স্তরগুলিতে পৃথিবীর একটি অত্যন্ত উষ্ণ সময়ের পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। গবেষণায় জানা গিয়েছে, তখন তাপমাত্রা আজকের চেয়ে বেশি ছিল। এই সময়কাল ‘আদি হলোসিন’ নামে পরিচিত। যা বরফ যুগের পরে শুরু হয়েছিল।
এই পতনের সময়কাল জানার জন্য বিরল বেরিলিয়াম আইসোটোপ এবং ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীবাশ্ম পরিমাপ করা হয়েছিল। সমস্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে পূর্ব অ্যান্টার্কটিক বরফস্তরটি ৯,০০০ বছর আগে ভেঙে গিয়েছিল। এর জন্য দায়ী ছিল সার্কাম্পোলার গভীর জলস্রোত। এটি একটি উষ্ণ, লবণাক্ত স্রোত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের কয়েকশো ফুট নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই জল উপরের দিকে উঠে মহাদেশীয় স্তরের উপর চলে আসে এবং বরফের স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। এই স্তরগুলিতে ফাটল ধরার ফলে বরফ কোনও অবলম্বন ছাড়াই সমুদ্রের দিকে দ্রুত প্রবাহিত হতে শুরু করে।
গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে বরফ এবং সমুদ্র একটি ইতিবাচক ফিডব্যাক লুপ তৈরি করেছিল। অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের গলিত জলের কারণে সমুদ্রের উপরিভাগের জল মিষ্টি হয়ে গিয়েছিল। উষ্ণ গভীর জল ভূমির দিকে সরে আসে। যার ফলে ‘ক্যাসকেডিং পজিটিভ ফিডব্যাক’ তৈরি হয়। অর্থাৎ, হালকা জল ভারী জলের উপরে চলে আসে। এর ফলে, শীতল উপরিভাগের জল নীচের জলের সঙ্গে মিশ্রিত হয়নি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রতলের আকৃতির মতো বেশ কয়েকটি কারণের জন্য এই পতন দ্রুত ঘটেছিল।
