আজকাল ওয়েবডেস্ক: শিশুদের জন্য কাজ করেছেন দীর্ঘ সময়। কাজ করেছেন সতেচতনামূলক একাধিক প্রকল্পেও। মুম্বই পণবন্দি কাণ্ডে রোহিত আর্যর মৃত্যুর পর থেকেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে।
জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর পড়ুয়া রোহিত, পড়া শেষ করে নিজের সংস্থা খুলেছিলেন। যে সংস্থা সরকারের নানা জন সচেতনতামূলক প্রকল্পগুলির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল। নানা সময়ে, একাধিক জনসচেতনতামূলক কাজ করেছে ওই সংস্থা। কাজ করেছে শিশুদের নিয়েও।
রোহিত প্রসঙ্গে ইতিমধ্যে সামনে এসেছে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী দীপক কেসরকর মন্তব্য। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মন্ত্রিত্বকালে রোহিতের সংস্থা সরকারের সচেতনতামূলক কর্মসূচি স্বচ্ছতা মনিটর-এ কাজ করত। মন্ত্রীর দাবি, ওই কাজের জন্য তিনি নিজেও ব্যক্তিগত টাকা দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রোহিত অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর সংস্থার বহু টাকা বকেয়া সরকারের কাছে। সরকার সেই টাকা দিচ্ছে না তাঁকে। তথ্য, রোহিত আর্য তাঁর সংস্থা, অপ্সরা মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে পরিচালিত নগর স্যানিটেশন এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযানের জন্য ২ কোটি টাকা বকেয়া সরকারের কাছে, দাবি করেছিলেন তেমনটাই। ২০২২-২০২৩ সালে, দু'বার তিনি কাজ করেছিলেন সরকারের হয়ে, তথ্য তেমনটাই।
আরও পড়ুন: উচ্চ-মাধ্যমিকের তৃতীয় সেমিস্টারের ফলে জেলার দাপট, মেধা তালিকায় প্রথম দশে ৬৯ জন
সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, এই উদ্যোগে ৫৯ লক্ষ শিক্ষার্থীকে 'স্বচ্ছতা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) মনিটর' হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তথ্য, ৩০ জুন, ২০২৩, ৯.৯ লক্ষ টাকা দিয়েছিল সরকার। শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, কাজ করার পর, আর্য যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন, তা অসম্পূর্ণ ছিল। তার সঙ্গেই, সরকার আর্যর কার্যকলাপ সম্পর্কে একাধিক অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেছে। অভিযোগ, ওই প্রকল্প চলাকালীন, আর্য স্কুলগুলির থেকে বেআইনি ভাবে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা নিতেন। সরকারের দাবি, আর্যর কাছে এই বেআইনি অর্থ সংগ্রহের অনুমতি ছিল না। গত বছরের আগস্টে আর্যকে তাঁর সংগৃহীত অর্থ একটি সরকারি অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল যে 'স্বচ্ছতা মনিটর' উদ্যোগ পুনর্নবীকরণের তার প্রস্তাবটি ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে না যতক্ষণ না টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বলা হয়েছিল, তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, তিনি আর টাকা তুলবেন না অন্যায়ভাবে।
বৃহস্পতিবার, সেই রোহিত আর্যই, মুম্বইয়ে ১৭ শিশুকে পণবন্দি করে ফেলেন। ওই জায়গায় মূলত অভিনয়ের ক্লাস চলত। অন্যান্য দিনের মতোই সেদিনেও বহু শিশু উপস্থিত হয়েছিল সেখানে। আরএ স্টুডিও নামক একটি ছোট ফিল্ম স্টুডিওর ভিতরে। রোহিত আর্য একদল শিশুকে "অডিশন" দেওয়ার জন্য ডেকেছিলেন সেখানে। আচমকা সকলকে চলে যেতে বলে, সেখানে শিশুদের বন্দি করে রাখেন রোহিত। ভিডিও বার্তায় ছড়িয়ে দেন পণবন্দি করার ঘটনা। জানিয়ে দেন, যা কিছু ঘটতে পারে, যে কোনও মুহূর্তে। পুলিশ জানিয়েছে, ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় দু' ঘন্টা ধরে আটকে রেখেছিলেন রোহিত। তাঁর দাবি মানা না হলে, ওই স্টুডিওতে আগুন ধরিয়ে দেবেন, এমন ভয়াবহ বার্তাও দেন ভিডিওর মাধ্যমে।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, 'আমি রোহিত আর্য। আত্মহত্যা করে মারা যাওয়ার পরিবর্তে, আমি একটি পরিকল্পনা করেছি এবং এখানে কিছু শিশুকে পণবন্দি করে রাখছি।' তিনি বলেন, 'সহজ দাবি, নৈতিক দাবি, এবং কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে আমার।' তিনি শিশুদের বদলে যদিও কোনও টাকা পয়সা দাবি করেননি। কেবল নিজের কথা বলতে চেয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তিনি বলেন,
'আমি সহজ কথাবার্তা বলতে চাই, আর সেই কারণেই আমি এই শিশুদের পণবন্দি করে রেখেছি। যদি আমি বেঁচে থাকি, আমি এটা করব, যদি আমি মারা যাই, অন্য কেউ করবে, কিন্তু এটা অবশ্যই ঘটবে।' বৃহস্পতিবার দুপুর দুটো নাগাদ, পুলিশের কাছে খবর পৌঁছতেই, পুলিশ তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করে রোহিত নামক ওই যুবকের সঙ্গে। তাঁর দাবিদাওয়া শোনা হয়। পুলিশ ওই শিশুদের মুক্তি দেওয়ার কথা বললে, সেই প্রসঙ্গে কিছুতেই সম্মতি দেননি রোহিত। একাধিকবার আলোচনায় ব্যর্থ হয়ে, বহু দলে ভাগ হয়ে পুলিশ কর্তারা ওই স্টুডিওতে ঢুকে পড়েন।
এর পরেই শুরু হয় উদ্ধারকার্যের রুদ্ধশ্বাস গুলির লড়াই পর্ব। রোহিত এয়ার গান থেকে গুলি চালান। পুলিশ পালটা গুলি চালালে, আহত হন যুবক। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও, শেষ রক্ষা হয়নি। ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলেই তথ্য সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য, পণবন্দি করে রাখা সকল শিশুকেই উদ্ধার করা হয়েছে সুস্থভাবে।
