আজকাল ওয়েবডেস্ক: মত্ত অবস্থায় তুমুল ঝামেলা। নেশার ঘোরে স্বামীকে কুপিয়ে খুন করলেন স্ত্রী। মেঝেতে রক্তের দাগ পরিষ্কার করতে গিয়েই শ্বশুরবাড়িতে ধরা পড়ে গেলেন তিনি।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, বিথুর এলাকায় মত্ত অবস্থায় ঝামেলার পর স্বামীকে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। গত বুধবার কানপুর নগর জেলায় স্বামীর মাথায় ভারী পাথর দিয়ে সজোরে আঘাত করেন স্ত্রী। এরপর কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেন। শুক্রবার ঘাতক স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ঘটনার সময় ৩৫ বছরের বীরাঙ্গনার শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না। মেঝেতে রক্তের দাগ মুছছিলেন তিনি। সেই সময় শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা বাড়ি ফিরে দেখেন, মেঝেতে লেগে থাকা রক্তের দাগ পরিষ্কার করছেন বীরাঙ্গনা। তখনও প্রাণে বেঁচে ছিলেন ৪৫ বছরের পাপ্পু সবিতা। তড়িঘড়ি করে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।
রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। এরপর লালা লাজপত রাই হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সেই হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পুলিশের কাছে বীরাঙ্গনা জানিয়েছেন, মত্ত অবস্থায় দু'জনের মধ্যে আচমকাই তুমুল ঝামেলা শুরু হয়। তখনই স্বামীর উপর হামলা করেন তিনি। কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেন।
ঘাতক স্ত্রী আরও জানিয়েছেন, প্রায়শই বাড়িতে মদের বোতল নিয়ে আসতেন পাপ্পু। জোরজবরদস্তি করে বীরাঙ্গনাকেও মদ খাওয়াতেন। মত্ত অবস্থায় দু'জনের একাধিকবার অশান্তি হয়েছিল অতীতে। মত্ত অবস্থায় সেদিন রাতে খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তিনি।
এদিকে পাপ্পুর মা জানিয়েছেন, বীরাঙ্গনার মদ্যপানের অভ্যাস ছিল। বিয়ের আগেও মদ্যপান করতেন। বোনের বাড়ি থেকে মদ্যপান করে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতেন। এমনকী এই কারণেই বৃদ্ধ শ্বশুর, শাশুড়িকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। স্বামীকে খুনের পর, শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের জানিয়েছিলেন, এটি দুর্ঘটনা। কিন্তু রক্তের দাগ পরিষ্কার করার সময়েই ধরা পড়ে যান।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে আরও একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ঝাড়খণ্ডে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের সেরাইকেলা- খারসওয়ান জেলায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামীর সঙ্গে নিত্যদিন অশান্তি হত স্ত্রীর। সেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে ঘিরে স্বামীকে কুপিয়ে খুন করেন ২৯ বছরের তরুণী।
জানা গেছে, অভিযুক্ত তরুণীর নাম, পূজা কুমারী। গত ১৫ জুলাই রাতে পাশাপাশি স্বামী, স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থাতেই রাজেশ কুমার মাহতা নামের যুবকের উপর কুড়ুল নিয়ে হামলা করেন পূজা। ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীকে একাধিকবার কুড়ুল দিয়ে কোপ মারেন। রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানাতেই রাজেশ কুমার মাহতার মৃত্যু হয়।
পুলিশ আধিকারিক কুমার লুনায়েত জানিয়েছেন, স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা আগেই করেছিলেন পূজা। তবে সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। ঘটনার দিন সন্তানদের অন্য ঘরে ঘুম পাড়িয়ে এসেছিলেন তিনি। রাজেশ খাওয়াদাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। গভীর রাতে কুড়ুল নিয়ে রাজেশকে কোপ মারেন।
রাজেশ মৃত্যু হয়েছে, তা নিশ্চিত হতেই ঘরের দরজা পিছন থেকে বন্ধ করে বেরিয়ে যান পূজা। এরপর তিন সন্তানকে ঘুম থেকে তুলে তিনি পালিয়ে যান। পরদিন সকাল থেকে গত কয়েকদিনে প্রতিবেশীরা তাঁদের কোনও সাড়াশব্দ পাননি। তাতেই সন্দেহ হয়। পুলিশে খবর দেন তাঁরা। রবিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। বাড়ির দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় রাজেশের পচাগলা দেহ।
ঘরের মধ্যেই ছিল রক্ত মাখা কুড়ুলটি। ঘরের ছন্নছাড়া অবস্থা দেখেই পুলিশের সন্দেহ হয়। এদিকে প্রতিবেশীরা জানান, সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী পূজা পলাতক। খুনের সন্দেহ হতেই পুলিশ পূজার খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। অবশেষে আটক করে তাঁকে। দীর্ঘ পুলিশি জেরায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই জানান, স্বামীকে তিনি খুন করেছেন।
পূজা আরও জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী, রাজেশ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অন্য এক তরুণীর সঙ্গে দিনের পর দিন কথা বলতেন ফোনে। প্রথমে সন্দেহ হলেও, পরে জানতে পারেন, সেই তরুণীর সঙ্গেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত স্বামী। অবশেষে তিনি খুনের পরিকল্পনা করেন। পূজাকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে তারা। ঘটনার তদন্ত এখনও জারি রয়েছে। পাশাপাশি খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটি এবং রক্তের দাগ লাগা দু'টি স্মার্টফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
